কলকাতা: কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত পরীক্ষা আগেই বাতিল করেছে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু আচমকা কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকা ঘিরে তৈরি হয়েছিল জটিলতা৷ মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ও ইউজিসি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়াদের পরীক্ষার নিতেই হবে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে৷ কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে রাজ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা হবে কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিভ্রান্তি৷ এবার সেই বিভ্রান্তি কাটাতে সরাসরি কেন্দ্রকে চিঠি পাঠাল রাজ্য৷ তোলা হয়েছে গুরুতর অভিযোগ৷
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য৷ করোনা আবহের মধ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানানো হয়েছে চিঠিতে৷ রাজ্য সরকারের তরফে আজ কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সচিব মণীশ জৈন৷ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিবকে দিয়েছেন চিঠি৷ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করারও আর্জি জানানো হয়েছে৷
কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশিকা জারি করেছে৷ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই পরীক্ষা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে৷ কিন্তু রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ক্যাম্পাসে গিয়ে কোনও রকম পরীক্ষা নেওয়া হবে না৷ বিগত পরীক্ষার নিরিখে ও বাকি কুড়ি শতাংশ হবে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে৷ এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছিল, কেন্দ্রে নির্দেশিকা৷ কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিতেই হবে৷ আর এই নিয়ে শুরু হয়েছিল দোলাচল৷ চরম সমস্যায় পড়েছিলেন রাজ্যের কয়েক লক্ষ পড়ুয়া৷
আজ রাজ্য সরকারের তরফে অবস্থান স্পষ্ট করে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠানো হয়েছে৷ তথ্য-সহ পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়েছে৷ যাতে রাজ্য তার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী কাজ চালাতে পারে৷ বলা হয়েছে, যেভাবে ‘বাধ্যতামূলক’ শব্দ লেখা হয়েছে, সেটা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী৷ কেননা শিক্ষা কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত৷ ফলে কেন্দ্রের তরফে একতরফা কোন সিদ্ধান্ত রাজ্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না৷ রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও তোলা হয়েছে অভিযোগ৷ এই বিষয়ে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন বলেও জানানো হয়েছে৷ পড়ুয়াদের স্বার্থে গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করা জরুরি বলেও জানানো হয়েছে৷
একই সঙ্গে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, গোটা বিশ্বের সঙ্গে বাংলায় করোনা সংক্রমণ জারি রয়েছে৷ বিশেষ একটা অংশের পড়ুয়াদের কাছে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট পরিষেবা ঠিকঠাক নেই৷ ফলে অফলাইন ও অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না৷ অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ৷ ট্রেন চলছে না৷ গণপরিবহন ব্যবস্থা এখনও সচল হয়নি৷ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি হয়েছে রাজ্যে৷ এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যাবে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷ একইসঙ্গে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের উদ্বেগের কথাও তুলে ধরা হয়েছে৷ একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, আইআইটি মুম্বই, খড়গপুর ফাইনাল পরীক্ষা বাতিল করেছে৷ পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, উড়িশা, রাজস্থানের মতো সরকার পরীক্ষা বাতিল করেছে৷ সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার আর্জি, কেন্দ্র যাতে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এবং রাজ্য সরকারের স্বাধীন সিদ্ধান্ত উপর গোটা বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হোক৷