কলকাতা: করোনা মহামারীর আবহে বদলে গিয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা৷ বন্ধ স্কুল-কলেজ৷ ধাপে ধাপে তা খোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার৷ দীর্ঘ প্রায় ছ’মাস থমকে গিয়েছে পঠনপাঠন৷ অনলাইন নির্ভর পঠন-পাঠন চালু হলেও তা সর্বস্তরে এখনও পৌঁছায়নি৷ এবার করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় বোর্ডের দেখানো পথে এবার হাঁটতে চলেছে রাজ্য৷ করোনার জেরে এবার পিছিয়ে যাতে পারে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা৷ একই সঙ্গে মাধ্যমিকের সিলেবাসেও বড়সড় কাটছাঁটের প্রস্তুতিও শুরু করেছে সিলেবাস কমিটি৷
করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই সিলেবাস কমিয়েছে কেন্দ্রীয় বোর্ড৷ এবার কেন্দ্রীয় বোর্ডের দেখানো পথে মাধ্যমিকে অন্তত ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সিলেবাসের কাটছাঁট করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে সিলেবাস কমিটি৷ পরীক্ষার দিনক্ষণ অপরিবর্তিত রেখে সিলেবাস কতটা কমানো যায়, তা নির্ধারণ করে অক্টোবর মাসের মাধ্যমে সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করতে চলছে সিলেবাস কমিটি৷ সিলেবাস কমিটির রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে, পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে৷
শুধু সিলেবাস কমানোর পাশাপাশি করোনার জেরে পিছিয়ে যেতে পারে উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষা৷ মার্চের বদলে এবার জুন মাসে পরীক্ষা হতে পারে৷ কেননা, কলেজে স্নাতকস্তরের শিক্ষাবর্ষ এবার কমিয়ে আনা হয়েছে৷ নভেম্বর থেকে পরের বছর আগস্ট পর্যন্ত নতুন শিক্ষাবর্ষ ঘোষণা করেছে ইউজিসি৷ ফলে, ওই বাড়তি কিছুটা সময় উচ্চমাধ্যমের জন্য বরাদ্দ হলে পড়ুয়ারা লাভবান হবেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ ফলে, উচ্চমাধ্যমিক পিছিয়ে গেলেও কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হবে না পড়ুয়াদের৷ অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারিতেই মাধ্যমিকের শুরুর ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে৷ পরীক্ষা সময় অপরিবর্তিত রেখে মাধ্যমিকে ৪০% সিলেবাস কাটছাঁট করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ যদিও আগামী বছরে কবে উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে, তার দিনক্ষণ এখনও সরকারি ভাবে জানানো হয়নি৷ এয়ার করোনা বিধি মাথায় রেখে পরবর্তী পরীক্ষা সূচি নির্ধারণ নিয়ে ইতিমধ্যেই চিন্তাভাবনা শুরু করেছে রাজ্য৷ কেননা আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে৷ ফলে সে দিকটিও ভাবতে হচ্ছে রাজ্যকে৷
মাধ্যমিক পরীক্ষা একই সময়ে হবে ধরে নিয়ে সিলেবাস কমানোর চিন্তাভাবনা শুরু করেছে সিলেবাস কমিটি৷ উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে সিলেবাস না কমিয়ে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষেও ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে সিলেবাস কমিটি৷ গোটা বিষয়টি এখনও রয়েছে আলোচনার পর্যায়ে৷ গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করার পর সিলেবাস কমিটি তরফে বিস্তারিত রিপোর্ট শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয় বলে জানা গিয়েছে৷ এরপর মুখ্যমন্ত্রী অনুমোদন দিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷
উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়া ও মাধ্যমিকে সিলেবাসে কাটছাঁট প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘এই বিষয়ে সিলেবাস কমিটির বিশেষজ্ঞরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেছেন৷ তাঁরা যে সিদ্ধান্ত আমাদের জানাবে, সেটা আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দেব৷ মুখ্যমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা আমরা পরবর্তী সময় জানিয়ে দেব৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ আমাদের সিলেবাস কমিটি যথেষ্ট সচেতন এই বিষয়ে৷ আমরা ছাত্রদের জন্য টিভি-রেডিওর মাধ্যমে পঠন-পাঠন শুরু করেছি৷ ফোনের মাধ্যমে পাঠানো পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে৷ অনলাইনে শুরু হয়েছে ক্লাস৷ ছাত্রদের ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা আমরা চাইনা৷ কীভাবে এই সময়টাকে ঠিক করে দেওয়া যায়, সে বিষয়ে যারা ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে৷ অল্প সময়ের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে৷’’
অন্যদিকে, সমস্ত উত্তীর্ণ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে উত্তরপত্র রিভিউ করার সুযোগ দেওয়া হোক বলেও দাবি তুলেছে শিক্ষত সংগঠন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ৷ এই বিষয়ে ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, ‘‘এতদিন পর্যন্ত মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করবার পর কোনও পরীক্ষার্থী কোনও বিষয়ের উত্তরপত্র রিভিউ করতে পারতেন না৷ শুধুমাত্র স্কুর্টিনির জন্য আবেদন করা যাতে৷ স্কুর্টিনির মাধ্যমে শুধুমাত্র উত্তরপত্রে দেওয়ার নম্বর যোগ করে দেখে নেওয়া হতো, ঠিক আছে কিনা৷ রিভিউয়ের মতো সম্পূর্ণভাবে উত্তরপত্রটি পুনরায় মূল্যায়নের সুযোগ ছিল না৷ আমরাব মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে আমাদের দাবি, যথাযথ মূল্যায়নের জন্য সমস্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী যাতে তাদের পছন্দমতো রিভিউ কিংবা স্কুর্টিনি করতে পারে তার সুযোগ দেওয়া হোক৷ এর জন্য নতুন নির্দেশিকা জারি করা হোক৷’’