কলকাতা: করোনা ভাইরাসের কোপে গোটা বিশ্বের করোনা কবলিত দেশগুলির শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু শিক্ষাবর্ষ, সিলেবাস এবং শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনার কথা মাথায় রেখে সময় নষ্ট করতে চাইছেনা দেশগুলির সরকার। লকডাউনের জেরে ভারতে একাধিক বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় বেশিরভাগ রাজ্যে পরীক্ষা ছাড়াই ক্লাসে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রিপ্রাইমারি থেকে এইট পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বোর্ডের পরীক্ষার দিনক্ষণ। কিন্তু নতুন ক্লাসে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা সিলেবাস শেষ করবে কিভাবে? সেক্ষেত্রে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে স্কুলগুলির জন্য ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের পড়াশোনা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। কোভিড -১৯ লকডাউন যদি এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তুলে নেওয়া , হয় তবে সরকার মে মাসের প্রথম সপ্তাহে অবশিষ্ট দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা নেওয়া যায় কিনা বিষয়েও চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিয়েছে সরকার।
মানবসম্পদ উন্নয়ন (এইচআরডি) সেক্রেটারি অমিত খারে, থাইপিন্টকে জানিয়েছেন যে শিক্ষাবর্ষের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে সরকার এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অনলাইনে নতুন শিক্ষাবর্ষের পড়াশোনা চালু করার ব্যবস্থা করছে। সিবিএসই বোর্ডের স্কুলগুলি থেকেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। জাতীয় শিক্ষা কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংকে (এনসিইআরটি) একটি বিকল্প একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল সরকার, তবে এই পরিকল্পনাটি সম্ভবত কার্যকর হবে না।
অনলাইনে ক্লাস শুরু করার জন্য, স্কুলগুলিকে প্রাইমারি ও হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ওপেন-লার্নিং স্টাডি মেটেরিয়াল দেওয়া হবে অনলাইনেই। এরজন্য এইচআরডি-পরিচালিত পোর্টাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং (এনআইওএস) দ্বারা পরিচালিত সোয়াম টিভি চ্যানেলগুলি অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডাইরেক্ট-টু-হোম (ডিটিএইচ) নেটওয়ার্কগুলিতে উপলব্ধ চ্যানেলগুলি বর্তমানে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য সিলেবাস সংক্রান্ত সমস্ত স্টাডি মেটেরিয়াল সরবরাহ করে।
কিন্তু পরিস্থিতি অনুসারে এখন জুনিয়র ক্লাসের সিলেবাস সংক্রান্ত স্টাডি মেটেরিয়ালগুলিকেও এই পোর্টালের একইসঙ্গে এরসঙ্গে যুক্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এনআইওএসকে। এদিকে লকডাউনের জেরে স্কুল বন্ধ থাকলেও পড়াশোনা বন্ধ রাখতে চাইছে না বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষও। সেক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে দেশের বহু বেসরকারি স্কুল। অনলাইন ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আইসিএসই বোর্ড। মঙ্গলবার বোর্ডের আওতাধীন সমস্ত স্কুলকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এরজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নানা অনলাইন পোর্টালের সাহায্য নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বোর্ডের পরীক্ষা দেবে এমন পড়ুয়াদের জন্য বিগত কয়েক বছরের টেস্ট পেপার সমাধান করার জন্যেও অনলাইনে ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে বোর্ডের তরফে। যেহেতু বোর্ডে সিলেবাস পড়ুয়ারা জানে তাই বিভিন্ন স্কুল থেকে প্রত্যেককে, বাড়িতেই বিষয়গুলি পড়ে নিতে বলা হচ্ছে। কোনও প্রশ্ন থাকলে, বা কিছু যদি বুঝতে অসুবিধা হলে অনলাইন ভিডিওর মাধ্যমে ক্লাস নিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর দেবেন শিক্ষকরা। পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি বোর্ডের আওতাধীন বেশ কিছু বেসরকারি স্কুলের পোর্টালে সিলেবাসও আপলোড করে দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষকরাও 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' করতে পারছেন। অনলাইনেই হোম ওয়ার্ক দেবেন শিক্ষকরা। পড়ুয়াদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ, জুমক্লাউড-এর মত অত্যাধুনিক সফটওয়্যারও ব্যবহার করা হচ্ছে নামিদামী স্কুলগুলিতে। যদিও কিছু স্কুল এখনই এই পদ্ধতিতে ক্লাস নিতে চাইছে না। কারণ সরাসরি সরকারি স্কুলগুলিতে এইধরণের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি সাধারণ পরিবারের সব পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনের সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়। যদিও সবিষয়টিও সরকারের চিন্তা ভাবনায় রয়েছে। তাই আর কোনো উপায় না থাকলে তাতে সাধারণ ফোনের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে তার জন্য প্রাথমিক ভাবে এসএমএস -এর মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এই জরুরী পরিস্থিতিটির প্রেক্ষাপটে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি দিল্লি (আইআইটি-ডি), দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় (ডিবি), জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ), জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া (জেএমআই), নেতাজি সুভাষ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসআইটি) সহ দেশের এমন বহু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও বন্ধ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রেও সমস্ত ক্লাস অনলাইনেই করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।