From village life to Harvard
রাঁচি: একটা মেয়ে। একটা গ্রাম। এক জোড়া ছেঁড়া বুট। আর বুকভরা স্বপ্ন। এই কয়েকটা উপাদানই কি যথেষ্ট? উত্তরটা আজ স্পষ্ট— হ্যাঁ, যথেষ্ট। সিমা কুমারী নামটা হয়তো আজ অনেকেই চেনেন। কিন্তু এই নামের পেছনে যে কত ঘাম, কত লড়াই, আর কত চোখের জল— তা জানলে গলা জড়িয়ে আসবে।
ঝাড়খণ্ডের দাহু গ্রামের কাঁচা মাটির পথ ধরে হাঁটা শুরু করেছিলেন সিমা। একটা ঘরে উনিশজন মানুষ। বাবা শ্রমিক, মা পড়াশোনা জানেন না। পরিবারের কারও কাছে স্কুল মানেই বাড়তি খরচ, মেয়েদের ক্ষেত্রে তো প্রায়ই সময় নষ্ট। সেখান থেকেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া, যেন অলৌকিক!
পরিবারে শিক্ষা ছিল না, কিন্তু স্বপ্ন ছিল From village life to Harvard
সিমার বাবা কাজ করতেন এক সুতোর কারখানায়। ছোট্ট একটি ঘরে ১৯ জন সদস্যের বাস। বাবা-মা কেউই স্কুলে যাননি। অথচ, সেই ঘর থেকেই জন্ম নেয় হার্ভার্ড পৌঁছনোর স্বপ্ন।
ফুটবলই খুলে দেয় সম্ভাবনার দরজা From village life to Harvard
২০১২ সালে গ্রামে আসে ‘Yuwa’ নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যারা মেয়েদের ক্ষমতায়নে ফুটবলকে ব্যবহার করে। তখন সিমার বয়স মাত্র নয়। তিনি সেই প্রোগ্রামে নাম লেখান। বাড়ির কাজ, পড়াশোনা সামলে ফুটবলের অনুশীলন চলত প্রতিদিন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করে জীবন।
২০১৫ সালে Yuwa নিজস্ব স্কুল শুরু করে, যেখানে মেয়েরা পায় উন্নত মানের শিক্ষা ও ছোট ক্লাসের সুবিধা। ৭০ জন ছাত্রীর ক্লাস থেকে সিমা চলে আসে মাত্র ৬ জনের ক্লাসে। এখানেই তিনি পান নিবিড় পরামর্শ ও যত্ন।
বিদেশি অভিজ্ঞতা, হার্ভার্ডে পৌঁছনোর পথ From village life to Harvard
ফুটবল প্রথম তাঁকে গ্রাম ছাড়িয়ে নিয়ে যায় জাতীয় টুর্নামেন্টে, পরে আন্তর্জাতিক শিবিরে। ১৫ বছর বয়সে তিনি ইংরেজি শেখা শুরু করেন, আর পাঁচ বছরের মধ্যেই সিমা সিয়াটেলে এক্সচেঞ্জ ইয়ার, ক্যামব্রিজ ও ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির গ্রীষ্মকালীন প্রোগ্রামে অংশ নেন।
হার্ভার্ড তখনও স্বপ্নের বাইরে। কিন্তু Yuwa-তে একদিন যোগ দিলেন ম্যাগি নামের এক ইংরেজ শিক্ষিকা, যিনি নিজে হার্ভার্ডের প্রাক্তনী। তিনি বললেন, “তুই পারবি।” সিমার জীবনে প্রথম কেউ তাকে হার্ভার্ডের নাম করে বলল, “তুই পারবি।” সিমার সম্ভাবনাকে চিনে নিয়ে তিনি সহায়তা করেন আবেদন, প্রবন্ধ, ফিনান্সিয়াল এইড ফর্ম পূরণে।
SAT পরীক্ষার খরচ নেই, শহরে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তার উপর কোভিড। কিন্তু আশ্চর্যভাবে সেই বছর হার্ভার্ড স্ট্যান্ডার্ড টেস্টের শর্ত তুলে দেয়। আর তাতেই খুলে যায় বন্ধ দরজা।
রাত তখন গভীর। ইমেল এল— “Congratulations, you’ve been accepted…”। সিমা বিশ্বাসই করতে পারল না। সাতবার ঘুম ভেঙে উঠেছিল সেদিন— ভাবছিল, স্বপ্ন তো নয়?
পুরো স্কলারশিপে হার্ভার্ড! দাহুর কাঁচা মাটির ঘরে তখনো কেউ জানে না ‘হার্ভার্ড’ মানে কী। কিন্তু সিমা জানে— এটা শুধু তার নয়, তার মতো লক্ষ মেয়ের জয়।
পড়াশোনা, স্বপ্ন, আর ফেরার তাগিদ From village life to Harvard
আজ সিমা হার্ভার্ডে অর্থনীতি নিয়ে পড়ছে। সে প্রথম প্রজন্মের কলেজছাত্রী। ক্লাস করে, পড়াশোনা করে, আর বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত থেকেও সে একটুও ক্লান্ত নয়। সে জানে, এই লড়াইটা শুধু নিজের নয়।
তার স্বপ্ন? নিজের গ্রামে ফিরে এমন একটা প্রোগ্রাম গড়ে তুলবে, যেখানে মেয়েরা শিখবে— হাতের কাজ, নিজের পায়ে দাঁড়ানো, আর নিজেকে ভালোবাসতে শেখা।
এখনও একটা প্রশ্ন ভাসে বাতাসে From village life to Harvard
“মেয়েরা খেলতে যায়? ওর বিয়ে কে করবে?” — এই প্রশ্নটা এখনও ভাসে দেশের হাজারো গ্রামে। কিন্তু দাহুর মাঠে এখনও একদল মেয়ে ফুটবল খেলছে, সিমার মতো। shorts পরে, মাথা উঁচু করে, মাটির ধুলো মেখে তারা শিখছে— বাঁচা মানেই বাধা নয়, বাঁচা মানে পারা।
বাধা পেরোনোর গল্প From village life to Harvard
বিয়ের চাপ, সমাজের বাঁকা চোখ, শর্টস পরায় কটূক্তি—সব কিছু সামলে সামনে এগিয়েছেন সিমা। স্কুল ফি জোগাড় করতে কোচিং করাতেন ফুটবল। মেয়েদের জন্য গ্রামে প্রথম একঝলক সাহসের বাতাস হয়ে ওঠেন তিনি।
ভারতে, যেখানে মাত্র ৩৯% গ্রামীণ মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পৌঁছায়, সেখানে সিমার গল্প অনন্য। অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, শিল্পপতি কিরণ মজুমদার শ’— অনেকেই তাঁর সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কিন্তু সিমার কাছে আসল সাফল্য সেই দিন, যেদিন তাঁর গ্রামে আরও মেয়েরা বলবে— “আমি পারব।”
Education: Seema Kumari’s journey from a small village in Jharkhand to Harvard University is a story of resilience. Overcoming poverty, societal barriers, and limited resources, she pursued education and football, proving that dreams can defy all odds. A true inspiration!