কলকাতা: হুগলির পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনায় ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার শুধুমাত্র পুলকারের জন্য আলাদা বিধি তৈরির পথে হাঁটছে। এই বিধি তৈরির জন্য রাজ্য প্রশাসন ও পুলকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে শুক্রবার একটি যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার নবান্নে পুলকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌরহিত্যে ওই বৈঠকে পরিবহন সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম, কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্রাফিক, রাজ্য পুলিশের আই জি ট্রাফিক ও স্কুল শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক উপস্থিত । সেখানেই যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। যৌথ কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে পরিবহন সচিবের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে। তার ভিত্তিতেই পুলকারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রযোজনীয় বিধি তৈরি করা হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
পাশাপাশি আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। বৃহস্পতিবার পরিবহন সচিবের কাছে পুলকার সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধি সহ বেশ কিছু দাবি পেশ করা হয়। তা নিয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। স্থির হয়েছে এবার থেকে সারা রাজ্যের পুলকারগুলির জন্য অভিন্ন লাইসেন্স দেওয়া হবে । আগে প্রত্যেক জেলার জন্য আলাদা আলাদা লাইসেন্স লাগতো।পাশাপাশি, ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে পাঁচ বছরের জন্য পৃথক লাইসেন্স দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত গাড়িকে পুলকার হিসাবে ব্যবহার করার প্রবণতায় লাগাম টানা যাবে বলে পরিবহন কর্তারা আশাবাদী। পাশাপাশি পুলকার যাত্রাকে খুদে পড়ুয়াদের জন্য নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা হয় নবান্নের বৈঠকে।
পুলকারকে নিরাপদ করতে গাড়ির মধ্যে সিসি ক্যামেরা জি পি এস বাধ্যতামূলক করতে চায় পরিবহন দপ্তর। প্রতি তিন মাস অন্তর ফিটনেস সারটিফিকেট নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। রিসোল টায়ার ব্যবহারও সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। পুলিশ ও পরিবহন দফতর চাইছে পুলকারে ভেহিক্যালস ট্র্যাূকার বাধ্যতামূলক করতে । এর ফলে ওই গাড়ি কোথায়, কখন যাচ্ছে, কত গতিতে যাচ্ছে তা জেনে ফেলা সম্ভব হবে। পুলকার মালিকরা এই সব সিদ্ধান্ত মানতে রাজি৷ কিন্তু তাঁদের দাবি, এত কিছু মানতে গেলে যে টাকা প্রতি মাসে খরচ হবে তার জন্য অবিলম্বে ভাড়া বাড়াতে হবে।
পুলকার সংগঠনের হিসেব অনুযায়ী , পড়ুয়াদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৭০০ থেকে ২০০০ টাকা অবধি ভাড়া আদায় হয়। এই টাকা থেকে চালকের বেতন, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি ও অন্যান্য খরচ দিতে হয়। সংগঠনের সদস্য সুদীপ দত্ত বলেন, “গাড়ির ভাড়া হয় প্রশাসন বিবেচনা করুক, না হয় অভিভাবকদের সাথে সমস্ত পক্ষ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিক। আমরা সুবিধা দিতে রাজি। কিন্তু আমাদের দিকটাও বিবেচনা করা হোক।” রাজ্যজুড়ে দু-ধরণের পুলকার চলে। ১০ আসনের ও ২৬ আসনের। ১০ আসনের পুলকার চলে অনেক সময় সাদা নম্বর প্লেটে। জেলার পাশাপাশি কলকাতায় চলছে এমন গাড়ি। তবে এই গাড়ি দিয়ে শুধুমাত্র ১টা শিফট করা হয়। স্কুলে নিয়ে আসা ও বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। আর ২৬ আসনের গাড়ি দিয়ে দুবার ট্রিপ করা হয়। অভিযোগ যে সমস্ত গাড়ি দিয়ে এই সব ট্রিপ করা হয়, তার অধিকাংশ পুরনো, লজঝড় অবস্থা। আর এই সব গাড়ির ফিটনেস নেই, নেই স্পিড গভর্নর। এছাড়া গাড়ির ভিতরের অবস্থা ভীষণ খারাপ। এটাই বদল করতে চাইছে পরিবহন দফতর।
১৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীরামপুর থেকে চুঁচুড়া যাওয়ার পথে একটি নয়ানজুলিতে পড়ে যায় বেশ কয়েক জন পড়ুয়া-সহ একটি পুলকার। ১৫ জন পড়ুয়ার সঙ্গে আহত হন ওই পুলকারের চালক পবিত্র দাসও। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ওই দুর্ঘটনায় ঋষভ সিং নামে এক ছ’বছরের পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। আরেক গুরুতর জখম ঋষভের সহপাঠী দিব্যাংশ ভগত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বৃহস্পতিবারই হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়েছে।