জয়পুর: স্বপ্নের কোনও সীমারেখা হয় না৷ স্বপ্নপূরণের অদম্য ইচ্ছা মানুষকে পৌঁছে দেয় তার লক্ষ্যে৷ হার না মানা চেষ্টা সফলতাকে এনে দেয় হাতের মুঠোয়৷ এই চেষ্টা দিয়েই ভাগ্য লিখলেন রাজস্থানের এক অজ গ্রামের ছেলে যোধারাম প্যাটেল৷
বাবার চূড়ান্ত শর্ত ছিল, ভালো চাকরি পেতে হলে বোর্ড পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ নম্বর পেতেই হবে৷ না হলে মুম্বই গিয়ে বেছে নিতে হবে শ্রমিকের কাজ৷ প্রথম শর্তটিকেই বেছে নেন যোধারাম৷ এরপর বাকিটা ইতিহাস৷ গ্রামের মাটি থেকে উঠে এসে ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এনট্রেন্স টেস্ট (এনইইটি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃষক পরিবারের সন্তান যোধারাম৷ বর্মার জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম দেদাবাস কা গোলিয়া৷ এই গ্রামেরই ছেলে যোধারাম৷ সব প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে এনইইটি’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি৷
আনন্দের খবর আসতেই আত্মীয় স্বজনের ঢল নামে নারিনগরমজি’র বাড়িতে৷ শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসে গোটা পরিবার৷ কিন্তু ৯ বছর আগে প্যাটেল পরিবারের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন৷ অনিয়মিত ও অপার্যাপ্ত বৃষ্টির জেরে বন্ধ হতে বসে চাষের কাজ৷ দোসর হয়ে ওঠে পলিসির সমস্য৷ সংসারে শুরু হয় টানাটানি৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ছেলেকে হুঁশিয়ারি দেন নারিনগরনজি৷ তিনি বলেন, ভালো চাকরি করতে চাইলে পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ নম্বর আনতেই হবে৷ না হলে মুম্বই গিয়ে কুলি-মজুরের কাজ করো৷ মন থেকে তিনি কোনও দিনই চাইতেন না যোধারাম তাঁর মতো চাষবাস করুক৷ তাই ছেলেকে শর্ত দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না তাঁর৷
সেই সময় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও পরিকল্পনা ছিল না যোধারামের৷ তিনি শুধু চাইতেন বাবার ইচ্ছার কাছে নিজেকে না সঁপে কলেজে পড়াশোনা করতে৷ দু’ বছর পর ২০১২সালে বোর্ডের পরীক্ষায় ৬৫ শতাংশ নম্বর পান যোধারাম৷ বাবা যে আর তাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার অনুমতি দেবেন না সে ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত ছিলেন যোধারাম৷ অনেক কাকুতু মিনতি, জোড়াজুড়ির পর অবশেষে যোধপুর কেআর পাবলিক সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে ভরতি হন তিনি৷ সুযোগ পান পড়াশোনা চালিয়ে যাবার৷ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর অধ্যাবসায়, কঠোর পরিশ্রম নজরে আসে স্কুলের প্রিন্সিপলের৷ তিনিই যোধারামকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার পরামর্শ দেন৷
কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সম্পর্কে কোনও ধারনাই ছিল না তাঁর৷ যোধারাম বলেন, ‘পড়ার বইগুলো দেখে আগেই হার মেনে নিয়েছিলাম৷ তাসত্ত্বেও পরীক্ষায় বসি৷’
সর্বভারতীয় স্তরে তাঁর ব়্যাঙ্ক হয় ১৫ লক্ষ৷ তাই সরকারি কলেজে ভরতির কোনও সুযোগ ছিল না৷ আর বেসরকারি কলেজে পড়ানোর সাধ্য ছিল না তাঁর পরিবারের৷ কিন্তু হাল ছাড়েনি যোধারাম৷ চতুর্থবার পরীক্ষায় বসেন তিনি৷ তাঁর র্যা ঙ্ক হয় ১২৯০৩৷ প্যাটেল বলেন, ‘আমরা যখন টিউশন ক্লাস করতাম সহপাঠীরা আমার থেকে অনেক এগিয়ে ছিল৷ সবার একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল৷ টিচার প্রশ্ন কারর সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর প্রস্তুত থাকত ওদের৷ ওদের কাছে পৌঁছতে অনেক সময় নিয়ে ফেললাম আমি৷’ পঞ্চমবার পরীক্ষায় ৩৮৮৬ ব়্যাঙ্ক করেন যোধারাম৷
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি যে গ্রামে থাকি, সেখানে চিকৎসা ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত৷ আশপাশের গ্রামেরও সে একই হাল৷ আমি একজন কার্ডিওলজিস্ট হয়ে চাই৷ তবে বাবার ইচ্ছা আমি শল্যচিকিৎসক হই৷ সাধ্যের মধ্য গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে চাই আমি৷ ’ ছেলের এই সাফল্যে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত যোধারের বাবা৷ তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশার থেকে অনেক বেশি দিয়েছে যোধা৷ আমি খুশি আমাকে ভুল প্রমাণিত করেছে আমার ছেলে৷