কলকাতা: চোখ রাঙাচ্ছে মহামারী৷ করোনা আতঙ্কের সিঁটিয়ে গোটা বিশ্ব৷ লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা৷ করোনার কোপে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বহু শ্রমিক৷ বন্ধ স্কুল-কলেজ৷ স্থগিত একাধিক পরীক্ষা৷ থমকে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা৷ করোনা পরিস্থিতির জেরে উদ্ভ্রান্ত জনতা যখন ভবিষ্যত ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না, ঠিক তখন মহামারীর সুযোগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব রটিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল থেকে শুরু করে অতিউৎসাহী কিছু নেটপাড়ার বাসিন্দা৷ করোনা আতঙ্কের মধ্যে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়েও ১৫ লক্ষ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে ছিনিমিনি খেলা৷ দায়িত্বজ্ঞানহীন এই নেটপাড়ার বাসিন্দাদের গ্রেপ্তারির দাবি তুলে শিক্ষামন্ত্রীর দরবারে চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষক সংগঠন৷ পরিস্থিতির গুরুত্ববুঝে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও কড়া ভাষায় বার্তা দিয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফেও ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে৷
সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিকের ভুয়ো পরীক্ষার সূচি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বেশকিছু নিউজ পোর্টাল ভুয়ো খবর প্রকাশ করে৷ আর তার জেরে গোটা বাংলাজুড়ে চরমে ওঠে বিভ্রান্তি৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবার মাঠে নামলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ শিক্ষামন্ত্রী তাঁর ফেসবুক পেজে ভিডিও পোস্ট করে ভুয়া পরীক্ষা সূচির বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় বার্তা দিয়েছেন৷ শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর আসছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসছে৷ উচ্চমাধ্যমিকের যে পরীক্ষা চলছিল, যার তিনটি পরীক্ষা বাকি আছে, তারা নাকি পরীক্ষার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে৷ এটা সম্পূর্ণ অসত্য৷ এই খবরের কোন ভিত্তি নেই৷ উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক করবে যখন, উচ্চশিক্ষা পর্ষদ, সরকারের সঙ্গে কথা বলে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে৷ আমরা সেটা ঘোষণা করব৷ কোনও সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর দেখে, সেই সমস্ত খবরের ভিত্তিতে বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ নেই৷ আমি আবার বলছি, উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা ঘোষণা করা হয়নি৷ যখন করা হবে, এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, উচ্চশিক্ষা পর্ষদ তাদের ওয়েবসাইটে ও সরকারের সঙ্গে কথা বলে তা অনুমোদন নেবে৷ এবং আমরাও বিজ্ঞাপিত করব৷’’
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যারা পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করলেন, তাদের বিরুদ্ধে এবার আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছে শিক্ষক সংগঠন, মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি৷ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়ে শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি বিশ্বজিৎ পোদ্দার ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র জানিয়েছেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর খবর ও ভুয়ো বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে উচ্চ মাধ্যমিক ও একাদশ শ্রেণি মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষকে বিভ্রান্তি করা হচ্ছে৷ অবিবেচক ও অনৈতিক এই কাজ যারা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা তো বটেই, এমনকি গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত৷ যাতে ভবিষ্যতে কেউ ভুয়ো খবর ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রন্ত করার সাহস না পায়৷ আমরা আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করছি, সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এই ধরনের ভুয়া বিজ্ঞপ্তি যারা ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে৷’’
করোনা আতঙ্কের মধ্যেও সাধারন জনতা রাতের ঘুম কেড়ে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া ভুয়ো খবর রুখতে এবার কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (মহিলা সুরক্ষা) পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ভুয়ো খবর ছড়ালে জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই ১৮৯৭ সালের মহামারী আইন লাগু করা হয়েছে৷ ১৮৬০ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধি মোতাবেক আইন অমান্য করলে ৬ মাস পর্যন্ত কারাবাস কিংবা ১০০০ টাকা জরিমানা অথবা দুই হতে পারে৷ এছাড়াও ভুয়ো খবর ছড়ানোর ক্ষেত্রেও ছ’বছরের জেল হতে পারে৷ এর আগে মঙ্গলবার অ্যাডভাইজরিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে জানানো হয়, দেশে করোনা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্ত করলে, সংশ্লিষ্টের ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লার সাফ জানিয়ে দেন, করোনা নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে৷ এই গুজব ছড়ানোর সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আইনে কড়া পদক্ষেপ করা হবে৷