কলকাতা: মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ইতিমধ্যেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশ করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানাধিকারী সমেত কৃতী ছাত্রছাত্রীদের নামও জেনে ফেলেছে সারা বাংলা। ফলাফল জানা গেলেও লিখিত আকারে তা হাতে পায়নি পড়ুয়ারা। আগামী ২২ এবং ২৩ জুলাই স্কুলগুলি থেকে মার্কশিট দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জেরে একটা দিন বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে রাজ্যে এমন ঘোষণা করার পর প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতি এবং শনিবার সম্পূর্ণ লকডাউন পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। এদিকে মার্কশিট দেওয়ার দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার পড়ছে। সে কারণে ২৩-এর জায়গায় ২৪ জুলাই অর্থাৎ শুক্রবার মার্কশিট দেওয়ার কথা ঘোষণা কয়ার হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২২ তারিখ তো দেওয়া হবেই। প্রতিটি স্কুলে নির্দেশিকা পাঠিয়ে বলা হয়েছে যাতে ওই দুই দিন অন্তত ৫০ শতাংশ শিক্ষক উপস্থিত থাকেন। এই মর্মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির তৈরি একটি ‘রোস্টার’ (উপস্থিতি সূচি) অনুসরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষক শিক্ষিকাদের।
অতিমারির পরিস্থিতিতে সবরকম সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে। পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বাক্ষর করা নির্দেশিকা সব স্কুলে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশিকায় মাস্ক, স্যানিটাইজার, শারীরিক দূরত্ববিধি পালনের কথা বলে দেওয়া হয়েছে। এই সতর্কতা বিধি পালিত না হলে তা পর্ষদ তার ব্যবস্থা নেবে। যে সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকা কন্টেনমেন্ট জোনের মধ্যে রয়েছেন তাঁদের জন্য অবশ্য ছাড় দেওয়ার কথা বলা রয়েছে এই নির্দেশিকায়।
শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘এই কঠিন পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলক নির্দেশ প্রত্যাহার করে চাল, আলু বিতরণের মতো করে একই ভাবে নির্দেশিকা দেওয়া হোক। কোথাও কোনো অসুবিধা হয়নি। মার্কশিট বিতরনের ক্ষেত্রেও কোন অসুবিধা হবে না। দূরদূরান্ত থেকে সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে হাজির হওয়ার নির্দেশিকা আরো সংক্রমণ ছড়াতে সাহায্য করবে।’’
এবিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘আমরা মনে করি করোনা আবহে পশ্চিমবঙ্গে যে উৎকণ্ঠার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বিদ্যালয়গুলিতে সমস্ত শিক্ষক শিক্ষা কর্মী দের নিয়ে আসার চেষ্টা অত্যন্ত অমানবিক সিদ্ধান্ত।বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে এমন অনেক শিক্ষক- শিক্ষাকর্মী আছেন যারা বহুদূর থেকে বিদ্যালয় আসতে বাধ্য হন। তাদের এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা বাঞ্ছনীয় নয়। প্রতি মাসে চাল আলু সহ মিড ডে মিল ডিসট্রিবিউশন প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের কাছাকাছি থাকা শিক্ষকদের সহযোগিতায় যেভাবে সম্পাদন করছেন, একই পদ্ধতিতে দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মার্কশিট অভিভাবক দের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব। আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করছি তিনি যেন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন এবং সামগ্রিকভাবে বিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ বিষয় গুলি সম্পাদন করার ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। প্রতিটি বিদ্যালয় তাদের নিজস্ব কর্মপন্থা অনুযায়ী শিক্ষক শিক্ষা কর্মীদের সাথে আলোচনা করে নিজেরাই সমস্যার সমাধান করে নিতে পারেন।’’
এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘মিড মিলের চাল-ডাল-আলু বিতরণের মত স্থানীয় শিক্ষকদের নিয়ে এই কাজটি সম্পন্ন করা যেত৷ কিছু শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই অর্ডার বের করতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে বাধ্য করা হয়েছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক৷ এর ফলে জেলার মধ্যে বা জেলার বাইরে স্কুল থেকে দূরবর্তী স্থানে যে সমস্ত শিক্ষকরা থাকেন তাঁরা সমস্যায় পড়লেন৷’’