মাধ্যমিকে চার লক্ষ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ কী? চিন্তিত আদালতও!

মাধ্যমিকে চার লক্ষ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ কী? চিন্তিত আদালতও!

 

নিজস্ব প্রতিনিধি: অতিমারি করোনাকে দূরে সরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা দেশ স্বাভাবিক হয়েছে। সবকিছুই চলছে আগের মতো। নিয়মিত হচ্ছে স্কুল-কলেজ ও সমস্ত পরীক্ষা। কিন্তু মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যেভাবে কমে গিয়েছে তা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে শিক্ষা মহলকে। কেন বিপুল সংখ্যক কমে গেল পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না শিক্ষা জগতের কর্তা ব্যক্তিরা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। যেভাবে বিপুল সংখ্যক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এ বছর কমে গিয়েছে তাতে সিলেবাস ঠিক করার পরামর্শ পর্যন্ত দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।

 

চলতি বছরে মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা চার লক্ষ কমে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক। তার আগে বুধবার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। এদিন অন্য একটি মামলার শুনানি চলাকালীন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বিচারপতি বসু বলেন,

‘‘মাধ্যমিকে এত পড়ুয়া কমে যাচ্ছে। এখন থেকেই রাজ্যের সতর্ক হওয়া উচিত। মাধ্যমিকের সিলেবাস ঠিক করুন। সিলেবাস ঠিক না হলে সমস্যা বাড়বে। দয়া করে এ দিকে নজর দিন।’’ সেই সঙ্গে তিনি জানতে চান,” শেষ কবে মাধ্যমিকের সিলেবাসে পরিবর্তন করা হয়েছিল?”

এ বিষয়ে তাঁর পরামর্শ,

 

“এখনই সতর্ক হোন। সিলেবাস ঠিক না হলে সমস্যা বাড়বে। আগের থেকে পড়াশোনার মান নীচে নেমে গিয়েছে। আমাদের সময় অঙ্কের পাঠক্রমের যে মান ছিল সেটা এখন নেই। অন্য বোর্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অবিলম্বে সিলেবাসের পরিবর্তন করা উচিত৷”

 

এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ৬ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬২৮ জন। গত বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ ৯৮ হাজার ৭৭৫। অর্থাৎ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা চার লক্ষ কমে গিয়েছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দাবি অতিমারি করোনার জন্যই এমনটা হয়েছে। বহু পড়ুয়া স্বেচ্ছায় পরীক্ষা দিচ্ছে না বলে পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন বহু পড়ুয়া টেস্ট পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি। পরীক্ষায় ফল খারাপ হবে, এই ভয়েই তারা পরীক্ষা দিচ্ছে না বলে মনে করছে পর্ষদ।  কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে স্কুলগুলিতে ক্লাস হয়েছে। তবে কি অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে পড়াশোনা ঠিকমতো হয়নি? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।

তবে মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা কলকাতা তথা রাজ্য জুড়ে যেভাবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দাপাদাপি বাড়ছে তাতে আকৃষ্ট হয়ে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের সেখানে পাঠাচ্ছেন। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্য জুড়ে এমন একটা মনোভাব তৈরি হয়েছে যে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে না পড়ালে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। আর দেখা যাচ্ছে পাড়ায় পাড়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গজিয়ে উঠেছে। সেই স্কুলগুলির পড়াশোনার মান যাচাই না করেই বহু সময় অভিভাবকরা সেখানে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছেন ছেলেমেয়েদের। স্বাভাবিকভাবেই মাধ্যমিকে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। তবে এটাও ঠিক যে শুধুমাত্র এই কারণে চার লক্ষ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেনি। রাজ্যের স্কুলগুলিতে বিপুল সংখ্যক ড্রপ আউটের ঘটনা ঘটেছে। কেন ছেলে-মেয়েরা হঠাৎ করে স্কুলমুখী হচ্ছে না তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে রাজ্য প্রশাসনকে। আসলে বহু ছেলেমেয়েকে বাড়ির অভাবের জন্য কোথাও না কোথাও কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার্থী সংখ্যা কমার এটাও একটা কারণ। সব মিলিয়ে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 3 =