বিশ্বভারতী: এক মাসের কিছু বেশি সময়ের ভিতর বদলে গেল ছবি৷ ১৭ অগাস্ট পৌষমেলামাঠে পাঁচিল দেওয়া নিয়ে রণক্ষেত্রর পরিস্থিতি তৈরি হয় বিশ্বভারতীতে। পাঁচিল ভেঙে ধুন্ধুমার বাধানো হয় রবি ঠাকুরের প্রাণের শান্তিনিকেতনে৷ শাসকদলের এক নেতার নেতৃত্বে স্থানীয় একটি দল উন্মত্ত জনতা পৌষ মেলা মাঠ বাঁচাও কমিটির নামে বিশ্বভারতীর গেট ভেঙে নির্মাণসামগ্রী লুঠ করে৷ চলে দেদার হুমকি৷ ৫-৭টি ট্রাক্টরে করে আনানো হয় বাহিনী৷ চলে লুট৷ কিন্তু তারপর সময় যত গড়িয়েছে ঘটনাপ্রবাহ এগিয়েছে একে একে৷
মেলার মাঠে সেই তাণ্ডবের পর পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিলেও আদালতের দ্বারস্থ হয় বিশ্বভারতী। কলকাতা হাইকোর্টের তরফে পুলিশকে তিরস্কার করা হয়। পাঁচিল তৈরিতে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি আদালত। ফলে এই আবহে পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের রূপ বদল করে ফেলল পৌষ মেলা মাঠ বাঁচাও কমিটি৷ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে গরমের বদলে নরমেই নিজেদের অবস্থান স্থির করল কমিটি৷ মাত্র মাস খানেক আগে রণং দেহির বদলে আপাতত গান্ধীগিরিকেই সারসত্য করে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও বাউলগানের মাধ্যমে প্রতীকী বিক্ষোভে সামিল হলেন কমিটির সদস্যরা৷
যদিও কমিটির আগেরবার রূপটির কথা মনে রেখে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জেলা প্রশাসনকে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির আর্জি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ সেইমতো এলাকায় জলকামান এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী প্রচুর পরিমাণে মোতায়েন ছিল৷ কিন্তু কমিটির এই হঠাৎ রূপ বদল নিয়ে বেশ খানিকটা হলেও অসন্তোষ মাথাচাড়া দিয়েছে অভিজ্ঞমহলে৷ তাদের মতে ভাঙচুর ও গুণডাগিরি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধের পরিস্থিতি তৈরির পর যখন দেখা গেল হাওয়া বদলে গেছে তখন কমিটির এই অবস্থান বদলের ছবি কিন্তু খোলা চোখেই ধরা পড়ছে৷ রবি ঠাকুরের এই ঐতিহ্যের কথা তারা এখন বলছেন, ১৭ অগাস্ট কিন্তু সেই আদর্শের ধারপাশও তারা মাড়াননি৷
পাশাপাশি এ বিষয়ে বিশ্বভারতীর অবস্থান নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছে। সমালোচকদের মতে গোটা বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হলেও নরম অবস্থান নিতেই পারতো বিশ্বভারতী। কারণ পৌষ মেলা শুধু ঐতিহ্য নয় এলাকাবাসীর আবেগের সঙ্গেও জড়িত। যদিও এ ব্যাপারে এদিন আদালতেও তাদের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়। আদালত জানায় পৌষ মেলা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ আদালত৷ প্রয়োজনে সেই নির্দেশে বদল করতে পারে৷ পৌষ মেলার একটা ইতিহাস আছে৷ এটা বন্ধ করা যাবে না৷ বিশ্বভারতী চাইলেও তা বন্ধ করতে পারে না৷