নয়াদিল্লি: করোনা আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে কাটবে আসন্ন দীর্ঘ একটা সময়! সুতরাং লকডাউনের শুরু থেকেই দেশের অন্যান্য কর্মস্থলের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব থাকবে লকডাউন পরবর্তী সময়েও। অ্যাকাডেমিক ইয়ার থেকে শুরু করে ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষা নেওয়া কোনও কিছুই যে আর স্বভাবিক থাকবে না, তার ইঙ্গিত মিলেছে বিশেষজ্ঞদের দেওয়া সাবধান বাণী থেকে৷ সেইভাবে একেরপর এক পরিকল্পনাও শুরু হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে৷
সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী আগামী, ১০ জুন পর্যন্ত সমস্ত সররকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এরপর যখন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা শুরু হবে তখন যাবতীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে কিভাবে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তা নিয়েই শুরু হয়েছে চিন্তা ভাবনা। এক্ষেত্রে ক্যাম্পাসগুলির স্বভাবিক চিত্রে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে বেশিরভাগ কলেজ কর্তৃপক্ষের মতেই কমনরুম, ইউনিয়ন রুম, ক্যান্টিন বন্ধ রাখা হোক। যদিও ক্যান্টিনের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে কমসংখ্যক পড়ুয়াদের একসাথে বসার ব্যবস্থা করা গেলে তবেই ক্যান্টিন খোলার ব্যাপারে ছাড়পত্র মিলবে।
ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখতে ক্লাসেও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং কলেজে মাস্ক পড়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক করার কথাও বলা হচ্ছে। তেমন দূরত্ব বজায় রাখতে অল্পসংখ্যক পড়ুয়াদের নিয়ে গ্রুপ করে ক্লাস করাতে চাইছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সবমিলিয়ে কলকাতা ও শহরতলির কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রস্তুতি কেমন তার একটা আগাম আভাস মিলছে। ইতিমধ্যেই স্কটিশ চার্চ কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের নতুন নীতিমালায় ‘নো মাস্ক নো ক্লাস’-এর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। পড়ুয়াদের পাশাপাশি, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। কলেজ ক্যাম্পাসে প্রত্যেকের জন্যই থার্মাল স্ক্রীনিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করাও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সহ অধ্যক্ষ সুপ্রতিম দাস। ক্লাস শুরুর আগে লকডাউনের মধ্যেই স্কটিশ চার্চ কলেজ ক্যাম্পাস স্যানিটাইজ করার কাজ চলছে। কলেজ ক্যাম্পাসে চিরচরিত আড্ডা বা জমায়েতের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, বেহালা কলেজে তো স্যানিটাইজার-টানেল বসানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কলেজের য়অধ্যক্ষ শর্মিলা মিত্র পরিচালন সমিতির সঙ্গে কথা বলে এই পদক্ষেপ শুরু করেছেন। কলেজের প্রবীণ শিক্ষক ও পড়ুয়াদের স্বস্থ্যবিধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে স্যোশাল ডিস্ট্যান্সিং বজায় রাখতে অনলাইনে ই কলেজের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রীরা অনেকেই ভিন রাজ্যের। তাই হস্টেলে ফেরার পর নিয়ম মেনে তাদেরকেও হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষা শিউলি সরকার। অন্যান্য কলেজগুলির মধ্যে বিদ্যাসাগর, মণীন্দ্রচন্দ্র, জয়পুরিয়া, বঙ্গবাসী, সুরেন্দ্রনাথ, সিটি কলেজে তিনটি শিফটে ক্লাস করানো হয় একটি বিল্ডিংয়ে। বিদ্যাসাগর কলেজের দিবা বিভাগের অধ্যক্ষ গৌতম কুণ্ডুর মতে পড়ুয়া থেকে শুরু করে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী প্রত্যেকেরই করোনা পরীক্ষা হ ওয়া উচিত। তবে সেক্ষেত্রে কম খরচে অর্থাৎ ৫০০ টাকা দামের করোনা টেস্টিং কিট কিনে কলেজকেই এই করতে হবে বলেও মত প্রকাশ করেছেন তিনি। রাখতে হবে থার্মাল স্ক্রিনিং ও, স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও।
বিদ্যাসাগর ও যোগেশচন্দ্র, দু’টি কলেজই আপাতত ক্যাম্পাসে জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকছে। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজে ছোট ছোট গ্রুপ করে ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি কমন রুম ও ইউনিয়ন রুম, ক্যান্টিনেও অবাধ বিচরণে রাশ টানার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়। তবে এক্ষেত্রে একেবারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে কলকাতা ও শহরতলির জেআইএস গ্রুপের কলেজগুলির জন্য। এই গ্রুপের মোট ১৩টি ক্যাম্পাসের গেটে স্যানিটাইজার-টানেলের সঙ্গে স়ংশ্পর্স এড়াতে কলেজের টয়লেট ও বেসিনে সেনসার লাগানো থাকবে বলেও জানিয়েছেন সংস্থার এমডি সর্দার তরণজিৎ সিং। সুতরাং করোনার প্রভাবে এতদিনের কলেজ ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ যে আমূল পরিবর্তন আসতে চলেছে তার সঙ্গে পড়ুয়ারা কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
শিক্ষা ও চাকরির খবরের জন্য নজর থাকুক AajBikel.com-এর পাতায়…