স্কুলেও সামাজিক বিদ্বেষের শিকার যৌনকর্মীর সন্তানরা, দায় নেবে রাষ্ট্র?

শাম্মী হুদা: ইচ্ছা থাকলেও সুস্থ জীবনে ফিরতে পারে না যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েরা, এমনটাই জানাচ্ছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রিপোর্ট। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন যৌনপল্লিতেই বড় বড় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে নানারকম জনকল্যাণ মূলক প্রকল্প চালানো হয়। যার অন্যতম সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচার, এর ফলে যৌনকর্মীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী নিয়ে সতর্ক হলেও কার্যক্ষেত্রে তার কোনওরকম প্রয়োগ দেখা যায় না। এর

স্কুলেও সামাজিক বিদ্বেষের শিকার যৌনকর্মীর সন্তানরা, দায় নেবে রাষ্ট্র?

শাম্মী হুদা: ইচ্ছা থাকলেও সুস্থ জীবনে ফিরতে পারে না যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েরা, এমনটাই জানাচ্ছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রিপোর্ট। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন যৌনপল্লিতেই বড় বড় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে নানারকম জনকল্যাণ মূলক প্রকল্প চালানো হয়। যার অন্যতম সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচার, এর ফলে যৌনকর্মীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী নিয়ে সতর্ক হলেও কার্যক্ষেত্রে তার কোনওরকম প্রয়োগ দেখা যায় না। এর কারণ যে শুধু যৌনকর্মীরাই এমন নয়, আমাদের পারিপার্শ্বিক সমাজও এজন্য সমান দায়ী।

প্রত্যেক মা-বাবাই চান তাঁদের সন্তান সন্ততিরা অন্তত সম্মানের জীবন নিয়ে বাঁচতে পারে। যৌনকর্মীরাও এই চাহিদার বাইরে নন, সে বাবাই হোক কিম্বা মা। তাইতো যৌনপল্লির অন্ধকার গলি থেকে সন্তানদের বাঁচাতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তাদের তুলে দেন। আর এই খুদেরা যখন স্কুলে ভর্তি হয়ে নিজেদের জন্ম পরিচয়কে নতুন আঙ্গিকে বদলে দিতে চায় তখনই ঘটে বিপত্তি। পরিসংখ্যান বলছে, শিশুমন যখন আর পাঁচজন সহপাঠীর কাছে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার বাসনা পোষণ করতে থাকে তখনই নেমে আসে অন্ধকার। একবার যদি জানাজানি হয়ে যায় যে ক্লাস ফাইভের রোল নম্বর ১২-র পড়ুয়াটি এক যৌনকর্মী মায়ের সন্তান, তখন শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক শিক্ষিকারাই তাকে বাঁকা নজরে দেখতে শুরু করেন।

এমনকী অন্য পড়ুয়াদেরও তার সঙ্গে মিশতে নিষেধ করেন, তখনও সেই খুদে জানে না তার কি অপরাধ। যে অন্ধকারময় অতীত থেকে তার মা তাকে উদ্ধার করে আলোর পথে নিয়ে যেতে চান, পারিপার্শ্বিক সমাজ ফের তাকে সেই পাঁকেই নিমজ্জিত করতে চায়। এই হল মোদ্দা কথা। যৌনকর্মীর সন্তানের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়ছে তাঁর ছেলে এমন খবর কানে আসতেই আতঙ্কিত অভিভাবকরা স্কুলে চড়াও হয়। শুরু হয় প্রতিবাদ বিক্ষোভ, ওই যৌনকর্মীর ছেলেকে স্কুল থেকে না তাড়ালে তাঁরা তাঁদের সন্তানকে আর এখানে পাঠাবেন না। খবর যায় সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে, কর্মীরা স্কুলে পৌঁছে জানতে পারেনি অভাগা শিশুটিকে ফিরিয়ে দিতে চায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। কেননা তার বংশপরিচয় জেনে গিয়েছে সকলে, শিশুটিও জানতে পারে সে কে কোথা থেকে এসেছে। তারও নিজের প্রতি ঘৃণা তৈরি হয়। এই যে তথাকথিত আধুনিক সমাজ একটি শিশুকে স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত করলা শুধুমাত্র সে যৌনকর্মীর সন্তান বলে, তাহলে প্রকৃত অপরাধী কে?

এর উত্তর প্রায় সকলেরই জানা, শুধু সংশোধনের পথ নেই। তাই বোঝাই যাচ্ছে এদেশে যৌনকর্মীর সন্তান স্কুলে এসেও বিদ্বেষের শিকার হচ্ছে। তবে তাদের কি উন্নতি হবে না, তারা কী সেই বাবা মায়ের পেশাতেই নিজেদের নিয়োজিত করবে? এই লাখটাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাওয়া বৃথা, সমাজের বদল এত সহজে হয় না। তাই শিশুদের অধিকার সংরক্ষণ সংস্থার নয়া সিদ্ধান্ত হল, এমন যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করতে তাদের বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হোক। একইসঙ্গে এইডসের সচেতনতা প্রচারও চলুক। এজন্য যৌনকর্মীদের সঙ্গে থাকা শিশু সন্তানদের পাশপাশি সেইসব ছেলেমেয়েরা যাদের পারিবারিক পেশায় যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে, প্রত্যেকেই এই শিক্ষা ও সচেতনতার প্রশিক্ষণ পাবে। যাতে সমাজ থেকে ব্রাত্য হয়েও নিজেদের ভবিষ্যত গড়ে নিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − nine =