কেন্দ্রীয় বাজেটের আড়ালে শিক্ষায় বেসরকারিকরণ? ক্ষুব্ধ রাজ্যের শিক্ষামহল!

কেন্দ্রীয় বাজেটের আড়ালে শিক্ষায় বেসরকারিকরণ? ক্ষুব্ধ রাজ্যের শিক্ষামহল!

 

কলকাতা: সোমবার করোনা মহামারী পরবর্তীকালের প্রথম সাধারণ বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন৷ গোটা বিশ্বের পাশাপাশি করোনা আবহে বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতের অর্থনীতিও। সেই ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করাই ছিল এই বাজেটের মূল লক্ষ্য। অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাশাপাশি শিক্ষাখাতেও নজর ছিল বাজেটের। ২০২১-২২ বাজেট শিক্ষাখাতে নির্মলা সীতারামনের সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে খুব একটা খুশি নয় এ রাজ্যের শিক্ষা মহল।

শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, ‘‘নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে শিক্ষায় জিডিপির হার ৬ শতাংশ করা হবে৷ বাস্তবে বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেছে কি? যদি ঘোষিত নীতির সাথে বাস্তবতার মিল না থাকে তাহলে তা কতটা আন্তরিক বোঝাই যায়। শিক্ষাখাতে বাজেটের ১০% বরাদ্দের দীর্ঘদিনের দাবি কার্যকর করার পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত কোনও সরকার গ্রহণ করেনি। অথচ শিক্ষানীতিতে অনেক ভালো ভালো কথার ফুলঝুরি ফুটছে৷’’

অন্যদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ঝাপবেড়িয়া হাইস্কুলের শিক্ষক তথা শিক্ষক নেতা অনিমেষ হালদার জানিয়েছেন, ‘‘আজ থেকে ১৬৪ বছর আগে সামান্য ইন্সপেক্টর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ৭ মাসে ৩০টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর আজকের কেন্দ্রীয় সরকারকে ১০০টি সৈনিক স্কুল তৈরি করার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও এনজিওদের সাহায্য নিতে হচ্ছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আসলে এই বাজেটের মাধ্যমে সরকারি উদ্যোগে শিক্ষাব্যবস্থাকে বেসরকারিকরণের রাস্তা পুরোপুরি খুলে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এখন প্রায় প্রত্যেক শিল্পপতিদের নামে-বেনামে বেশ কয়েকটি করে এনজিও খুলে রাখা আছে।’’

তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আদিবাসী এলাকায় যে ৭৫০টি একলব্য স্কুলের কথা বলা হয়েছে, তার মাধ্যমে আসলে শিক্ষাব্যবস্থাকে গৈরিকীকরণ করা হবে বলে আমি মনে করি৷’’ আবার শিক্ষক সংগঠন অল পোস্ট গ্রাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন গড়াই দাবি করেছেন, ‘‘শিক্ষাখাতে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ থাকলেও শিক্ষা ও বিদ্যালয়ের জন্য সেই অর্থের যথাযথ ব্যবহার ও বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।’’

সোমবার কেন্দ্রীয় বাজেট ঘোষণার সময় নির্মলা সীতারমন নিম্নমুখী অর্থনীতির মাঝেও শিক্ষার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যে ঘোষণা করলেন তা নিম্নরূপ:

জাতীয় শিক্ষার বিস্তারে দেশের ১৫০০০ স্কুলের উন্নয়নের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। এই স্কুলগুলি দেশের এনইপি মডেল হিসেবে তুলে ধরা হবে ভবিষ্যতে। বেসরকারি সংস্থা এবং বিভিন্ন এনজিও’র সঙ্গে কেন্দ্র সরকার হাত মিলিয়ে নতুন ১০০ টি সৈনিক স্কুল গঠন করবে আগামী অর্থবর্ষে। এনইপি’র অন্তর্গত কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে পঞ্চম সংযুক্তিকরণের আওতায় আনা হবে। দেশের সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় একটি উচ্চ শিক্ষা সংসদ নির্মাণ করা হবে আগামী অর্থবর্ষে। উচ্চশিক্ষা কমিশন তৈরি করা হবে৷ লাদাখ রিজিয়নে শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে লেহ’তে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হবে কেন্দ্র তরফে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ৭৫০ আবাসিক একলব্য স্কুল গড়ে তোলা হবে, যার খাতে ৩৫২১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।  প্রযুক্তিবিদ্যায় উন্নয়নের খাতে ৩০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল এবং প্রযুক্তি বিদ্যার বিকাশের ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরসাহী’র সঙ্গে ভারতের একযোগে কাজ করার কথাও ঘোষণা করা হল। গবেষনার খাতে বিশেষ নজর দেওয়া হল এই বাজেটে এবং এই খাতে বিষ কিছু বরাদ্দের কথাও ঘোষণা করা হল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × one =