কীভাবে দেশের উচ্চশিক্ষায় জাতপাতের দাপট? উচ্চ শিক্ষার প্রথম ধাপেই কীভাবে ব্রাত্য দলিত?

কীভাবে দেশের উচ্চশিক্ষায় জাতপাতের দাপট? উচ্চ শিক্ষার প্রথম ধাপেই কীভাবে ব্রাত্য দলিত?

নয়াদিল্লি:  স্কুল, কলেজে ওদের এড়িয়ে চলা হয়। কখনও কখনও ঝাড়ুদারের কাজ করে ওরা। সাফ করে শৌচালয়। একটাই পরিচয়ে ওরা পরিচিত। ওরা দলিত। যে দলিতদের বঞ্চনা আম্বেদকরকে  সম্মান জানিয়েই চলছে বেশ। দেশের কিছু দলিত-পীড়ন ছবি সেই ঘটনার প্রমাণবাহী। মোদীর দেশে উচ্চতর শিক্ষায় কীভাবে জাতপাতের ঘনঘটা তার প্রমাণ দিচ্ছেন এন. সুকুমার তাঁর লেখা –  Caste Discrimination and Exclusion in Indian Universities: A Critical Reflection- বইতে। বিভিন্ন কলেজের হস্টেল, ক্লাসরুম, সাংস্কৃতিক মঞ্চে কীভাবে কোনঠাসা হচ্ছে দলিত পড়ুয়ারা। অন্তত ৬০০ দলিত পড়ুয়ার সাক্ষাতকার নিয়ে তথ্যভিত্ত্ক এই বই সুকুমার লিখেছেন ২০২২ সালে। যেখানে স্পষ্ট হবে কোথায় দাঁড়িয়ে দেশের দলিত।

 

দিল্লির দলিত ছাত্রীকে কটাক্ষ করে বলা হচ্ছে- কোটা না কোঠা থেকে সে এসেছে। দিল্লি সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরেই নেওয়া হয় এসসি, এসটি কোটায় আসা পড়ুয়ারা মেধাবী নন। একজন দলিত ছাত্র বা ছাত্রীকে পাস করাতে চান না উচ্চবর্নের অধ্যাপকরা। একজন দলিত পড়ুয়ার বৃত্তি পর্যন্ত আটকে দেওয়ার ঘটনা ঘটে চলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে জাতাপাতের ধারণা উচ্চশিক্ষায় ব্যক্তিগত হয়ে উঠছে। সুকুমারের লেখায় ৬০০ পড়ুয়াদের মধ্যে বেশিরভাগই পরিষ্কার করেছে শৌচালয়, ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করছে কলেজ চত্ত্বর । বৈষম্যের বর্নালীতে এই ছবি দেশের অন্দরে ঘটে চলেছে।

 

হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোহিত ভেমুলা যে ছাত্রর আত্মহত্যার চিঠি দেশকে কাঁপিয়ে দেয়। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সেদিন। তারপরেও কি দলিত নিগ্রহ কমেছে? এক কথায় উত্তর কোনওভাবেই না। দেশ দলিতদের উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষন দেয় ঠিকই, পাশাপশি তাদের ঠেলে দেয় কোনঠাসার খাদে। যেখানে এক দলিত পড়ুয়া তার নোট বইতে লেখে আত্মহত্যার চিঠি। এন সুকুমারের লেখা বইটি ময়দানে নেমে তথ্য সংগ্রহের পর লেখা। যাকে বই বলা ভুল হবে বরং বলা যায় দেশের দলিতদের অবস্থা ব্যখ্যার এক গুরুত্বপূর্ণ নথি। 

 

দলিতদের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্র এক নীপিড়ন মূলক ব্যবস্থা। যেখানে প্রতিনিয়ত তাদের বোঝানো হয়, তাদের শিক্ষার অধিকার নেই, তাদের উপর দয়া করা হচ্ছে। তাই হয়ত রাজস্থানের শিক্ষক দলিত ছাত্রকে এতটাই মারেন যে তার মৃত্যু হয়। হয়ত একই কারণে সোনি সোরিকে আদিবাসী বলেই অত্যাচারিত হতে হয়। দেশের ২৫ শতাংশ দলিত পড়ুয়ারা ঠিক একই যন্ত্রনায় ভুক্তভোগী। এন, সুকুমার যিনি নিজে দিল্লি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। তাঁর লেখায় ধরা পড়ছে, দলিত অধ্যাপক বা অধ্যাপিকাদেরও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন  হতে হয়। এমনকি মহিলা দলিত অধ্যাপক বা পড়ুয়াদের যৌন হেনস্থারও শিকার হতে হয়। উচ্চশিক্ষায় এই জাতপাত আসলে কলঙ্ক। স্পষ্ট সুকুমারের লেখায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 3 =