বাতিল হোক স্টাফ প্যাটার্নের নির্দেশ, জমছে ক্ষোভ, বাড়ছে ধোঁয়াশা

কলকাতা: রাজ্য সরকারি কর্মীদের অপশন ফর্ম ফিলাপের সময়সীমা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত৷ এখনও ধোঁয়াশা কাটলো না শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের৷এমনকি তাদের দাবি মেনে নির্দিষ্টভাবে শিক্ষাদপ্তর কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি৷ তাই স্টাফ প্যাটার্ন দাখিলের নির্দেশ প্রত্যাহার করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে এবার শিক্ষা দপ্তরের কাছে দাবি জানাবে রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ৷ তাদের মতে, স্টাফ প্যাটার্নের বিষয়ে যেসব প্রশ্নগুলি উঠে

বাতিল হোক স্টাফ প্যাটার্নের নির্দেশ, জমছে ক্ষোভ, বাড়ছে ধোঁয়াশা

কলকাতা: রাজ্য সরকারি কর্মীদের অপশন ফর্ম ফিলাপের সময়সীমা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত৷ এখনও ধোঁয়াশা কাটলো না শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের৷এমনকি তাদের দাবি মেনে নির্দিষ্টভাবে শিক্ষাদপ্তর কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি৷ তাই স্টাফ প্যাটার্ন দাখিলের নির্দেশ প্রত্যাহার করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে এবার শিক্ষা দপ্তরের কাছে দাবি জানাবে রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ৷

তাদের মতে, স্টাফ প্যাটার্নের বিষয়ে যেসব প্রশ্নগুলি উঠে আসছে সেগুলি সমাধানের জন্য শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে আন্দোলনকারী সমস্ত সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ করা হোক৷ তার ভিত্তিতে যথাযথভাবে শিক্ষা দপ্তর থেকে পুনরায় সম্পূর্ণ পূর্ণাঙ্গ সংশোধনী দেওয়া হোক৷ এর আগে কোনভাবেই স্টাফ প্যাটার্ণ সংক্রান্ত কোনো কাগজে স্বাক্ষর করা ঠিক হবে না বলেই মত প্রকাশ করেছেন মঞ্চের সদস্যরা৷ পাশাপাশি,রাজ্যের জুনিয়র, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে তাদের আবেদন, কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তারা যেন এবিষয়ে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং বাস্তব সমস্যা গুলিকে তুলে ধরেন৷

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারি কর্মীদের অপশন ফর্ম রোপা ২০১৯-র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এরপর ১৫ নভেম্বর অপশন ফর্ম ফিলাপের নির্দেশিকা জারি হয়৷ ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই এই ফর্ম ফিলাপ করে জমা দিতে হবে সমস্ত রাজ্য সরকারী কর্মীকে যার আওতায় আছেন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরাও৷ কিন্ত ৩১ সেপ্টেম্বর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্টাফ প্যাটার্নের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি পূনর্বিবেচনার দাবি জানানো হলে এখনও পর্যন্ত সেবিষয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি শিক্ষা দপ্তর৷ এদিকে স্কুল গুলিতে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আর কিছুদিনের মধ্যেই৷ সুতরাং অপশন ফর্ম ফিলাপ এবং পে ফিক্সেশন নিয়ে শিক্ষক দের হাতে আর বেশি সময় নেই৷

গত ১৬ সেপ্টেম্বর স্টাফ প্যাটার্ণের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তর৷ আর তার পরেই এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা৷ বেশ কয়কটি বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায় রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ৷ তারপর গত ৩১ অক্টোবর অনলাইন স্টাফ প্যাটার্ন প্রক্রিয়ায় ধোঁয়াশা কাটাতে পুনরায় সংশোধিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় শিক্ষা দপ্তরের তরফে৷

স্কুল শিক্ষা দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল- নরমাল সেকশন টিচারদের হয় উচ্চ প্রাথমিক নাহলে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতা করতে পারবেন৷ সেক্ষেত্রে উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকশিক্ষিকাদের ভূমিকা ও দায়িত্ব অপরিবর্তিত থাকবে৷ পুনর্নিমিত এই স্টাফ প্যাটার্নে পে-স্কেল ও অন্যান্য শর্তাবলীর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না৷ উপযুক্ত যোগ্যতার নিরিখে যেকোনো শিক্ষক শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকা পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন৷ প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে এই ওয়েব এনাবল স্টাফ প্যাটার্ন কার্যকর করতে হবে৷

শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ বক্তব্য, স্কুল শিক্ষা দপ্তর বর্তমান সময় পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে স্কেলে রয়েছেন সে ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না বলে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে৷ কিন্তু ট্রান্সফারের বিষয়ে কোনো উল্লেখ সেখানে নেই৷ বিগত দিনে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আপার প্রাইমারি সেকশন শিক্ষাব্যবস্থায় ছিলনা৷ তখন নরমাল সেকশনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়োগ করা হতো৷ রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট এর পর আপার প্রাইমারি ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৷ বর্তমানে তাই প্রাথমিক শিক্ষার পর বিদ্যালয় শিক্ষায় তিনটি বিভাজন হয়ছে৷ আপার প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি৷ যদিও নতুন শিক্ষানীতি – ২০১৯-এ উচ্চমাধ্যমিক ব্যবস্থাকে বিলোপ করার প্রস্তাবও রয়েছে৷

স্বাভাবিকভাবেই ২০১৬ সালের আগে নিযুক্ত শিক্ষকদের অধিকাংশই নরমাল সেকশনে ছিলেন, বাকিরা হায়ার সেকেন্ডারি সেকশনে৷ তাঁদের মধ্যেও আবার কেউ পাশ, কেউ অনার্স, কেউ বা পিজি স্কেলে রয়েছেন৷ ক্যাটাগরি ভিন্ন থাকলেও বিভিন্ন শ্রেণীতে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে এপর্যন্ত কোন অসুবিধা হয়নি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে৷ বর্তমানে পে-প্রোটেকশন ঘোষণার পর এই নতুন বিভাজিত অবস্থায় যদি শিক্ষকশিক্ষিকারা কেউই আপার প্রাইমারিতে না যাওয়ার জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তাহলে হায়ার সেকেন্ডারিতে নিয়োজিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাদ দিয়ে বাকি সবাই সেকেন্ডারি সেকশনে থেকে যাবেন৷ সেক্ষেত্রে আপার প্রাইমারিতে শিক্ষক পদ শূন্য থেকে যাবে৷ কিন্তু সেকেন্ডারিতে বিপুল পরিমাণ শিক্ষক শিক্ষিকা উদ্বৃত্ত হয়ে যাবেন৷ তখন সরকার ওই উদ্বৃত্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাধ্যতামূলকভাবে অন্যত্র বদলি করতে পারে কিনা সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৷ বর্তমানে জুনিয়র স্কুলগুলিতে নিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই অনার্স/পিজি স্কেল পাচ্ছেন৷ যেখানে তাঁরা সবাই আপার প্রাইমারি৷ এছাড়া ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে কিনা সেটাও ভালো করে জেনে নেওয়া দরকার বলেও মত পোষন করেছে শিক্ষকমহল৷ গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলি ভালো করে না জেনে স্টাফ প্যাটার্ন দাখিলের বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না তারা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 3 =