কোল্লাম: ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়৷ আর ১০৫ বছরেও পূরণ করা যায় স্বপ্ন৷ জীবের শেষ লগ্নে এসেও শুধুমাত্র ইচ্ছা শক্তির সৌজন্যে চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষায় বসে সফল হলেন কেরলের ১০৫ বছরের ‘কিশোরী’ ভাগীরথী আম্মা৷ল গড়লেন ইতিহাস৷ এখন লক্ষ্য মাধ্যমিক স্তরেও স্কুলে নাম লেখানো৷
জানা গিয়েছে, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর স্কুল ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে৷ মাত্র ন’বছরে সংসার সামলাতে চলে যেতে হয়েছিল অন্যের ঘরে৷ দীর্ঘ ৯৬ বছর সংসারে এখন নাতিপুতিদের ভিড়৷ কিন্তু, সেই শৈশবের ফেলে আসা অসমান্ত স্কুল জীবন পূর্ণ করে ১০৫ বছর বয়সে স্বপ্নপূরণ ভাগীরথী আম্মার৷
অফুরন্তু মনোবল, জেদ নিয়ে বসেছিলেন চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষায়৷ পরীক্ষা শেষে আত্মবিশ্বাসী আত্মা জিনিয়েছিলেন, উত্তীর্ণ তিনি হবেনই৷ আর সেটাই হল৷ শুক্রবার ফল প্রকাশ হতেই দেখা গিয়েছে, সব বিষয়ে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন তিনি৷ স্কুল শিক্ষকরা তাঁর বাড়িয়ে গিয়ে দিয়ে এসেছেন রেজাল্ট৷ চতুর্থ শ্রেণি পাস করতে পেরে ফোঁকলা মুখে সে কী দারুণ হাসি৷ খুশি গোটা পরিবারও৷ তাঁর এই সাফল্য কেরলের শিক্ষার ইতিহাসে নাম তুলে দিয়েছে ভাগীরথীদেবীকে৷ চতুর্থ শ্রেণি পাস করে তিনিই এখন প্রথম প্রবীণতম চতুর্থ শ্রেণির সফর পরীক্ষার্থী৷ আম্মার সাফল্যের পর কেরলের শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, তাঁরা চান, আত্মাকে স্বাক্ষরতা মিশনের মুখ হিসাবে প্রচার করতে৷ এখন আম্মার সম্মতির অপেক্ষা৷
কেরলের কোল্লাম জেলার পারাকুলামের বাসিন্দা ভাগীরথীদেবী৷ ন’বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসে তাঁকে৷ আর সেই কারণে প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি তিনি৷ কিন্তু, মনে মনে ছিল আক্ষেপ৷ পাওয়া না পাওয়ার যন্ত্রণা বুকে আগলে ৬ ছেলেকে বড় করে তুলেন তিনি৷ ৬ সন্তানের দেখাশোনা থেকে শিক্ষার ব্যবস্থা, সবই করেছেন দক্ষ হাতে৷ এই মুহূর্তে ১৬ নাতি-নাতনি আম্মা ভাগীরথীদেবী৷ আর সেই নাতি-নাতনিদের ইচ্ছায় চতুর্থী শ্রেণির পরীক্ষার প্রস্তুতি দেন আম্মা৷ আর তাতেই মিলল সাফল্য৷
চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবার মাধ্যমিক স্তরেও স্কুলে নাম লেখানোর ইচ্ছা রয়েছে তাঁর৷ তবে, একটাই আক্ষেপ, ততদিন ঈশ্বর বাঁচিয়ে রাখবেন তো? স্বপ্নপূরণের পরও বিদায় বেলার দিন গুনছেন ভাগীরথী আত্মা৷ মনে মনে বলেই চলেছেন, আর কটা দিন যদি সময় পেতাম…