কলকাতা: শিক্ষা দপ্তর একাধিকবার নির্দেশিকা জারি করা সত্ত্বেও অসম্পূর্ণ থেকে গেল বাংলা শিক্ষা পোর্টালে তথ্য তোলার কাজ৷ রাজ্যের দেড় কোটিরও বেশি পড়ুয়ার প্রোমোশন সংক্রান্ত তথ্যপঞ্জি ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে তোলার শেষ সময়সীমা পেরিয়ে হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই কাজ শেষ করতে পারেনি রাজ্যের অধিকাংশ স্কুলই৷
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য শেষবার গত ২৪ ডিসেম্বর নির্দেশ দিয়েছিল, স্কুলশিক্ষা দপ্তর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল৷ তারা নিয়মিত ডিআই থেকে এআইদের জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি তদারকির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ সেইমতো ডিআই-এআই’রাও নিয়মিত ভাবেই যোগাযোগ রাখছিলেন প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে৷ একইভাবে রেজাল্ট আপলোড করার চূড়ান্ত সময়সীমাও ব্যর্থ হয়েছে৷ এক্ষেত্রে সময়সীমা ছিল ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত৷ ক্রিসমাসের ছুটিতে কাজ করেও পুরো তথ্য জোগাতে পারেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ৷
স্কুলগুলির তরফ থেকে এবিষয়ে একাধিক সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ সমস্যাগুলির মধ্যে যেমন আছে সার্ভার ডাউন, পোর্টালের ফরম্যাটে ত্রুটি৷ তেমনই আছে পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলনের জেরে শিক্ষকের অভাব, শিক্ষার পদ্ধতিগত ফাঁক৷
বাংলা শিক্ষা পোর্টালে তথ্য সংযোগের ক্ষেত্রে বহু জায়গায় শেষ মুহূর্তে সার্ভার ডাউন থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে৷ ফরম্যাটের ক্ষেত্রে ক্লাস নাইন ও ক্লাস টেনের সমস্যার কথা বলতে গিয়ে শিক্ষকদের বক্তব্য, এই দুটি ক্লাসেই পাশফেল রয়েছে৷ যে ছাত্রছাত্রীরা পাশ করেছে, পোর্টালের ফরম্যাট অনুযায়ী তাদের ক্লাস টেন-এ নাম তুলে দিতে হবে৷ আর যারা ফেল করবে, তাদের ক্লাস নাইনে রেখে দিতে হবে৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে স্কুলছুট ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষেত্রে যারা পরীক্ষা বা অ্যাডমিশন, কোনওটিতেই অংশ নেয়নি ফরম্যাটের অপশন অনুযায়ী তাদের স্কুলছুট দেখানো যাচ্ছে না৷ কারণ সেখানে ওই অপশনই নেই৷ সেক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থীদের মনগড়া একটা সংখ্যা দিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে রেখে দেওয়া হচ্ছে সরকারিভাবে৷ রোল নম্বর, সেকশন রয়েছে, কিন্তু পড়ুয়া নেই,এভাবে যেমন ভুল তথ্য জমা দেওয়া যাচ্ছে না তেমনই প্রশাসনকেও এর জটিলতা বোঝানো যাচ্ছে না৷
শিক্ষার পদ্ধতিগত ত্রুটি বলতে শিক্ষকরা যেটা বলতে চাইছেন তা হল, ক্লাস এইট পর্যন্ত কোনও পাশফেল না থাকায় সেক্ষেত্রে স্কুলছুট ছাত্র-ছাত্রীদের বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা যাচ্ছে না রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি ও শিক্ষার অধিকার আইনের অনেকাংশে পরিপন্থী হিসেবে বিবেচনা করে৷ কেন্দ্রের নির্দেশ মত স্কুল ছুট অর্থাৎ ড্রপ আউট ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পার্শ্বশিক্ষকদের৷ একে বলা হয় চাইল্ড ট্র্যাকিং৷
কিন্তু পোর্টালে ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্যপঞ্জি দেওয়ার যে বিশেষ ফরম্যাট আছে সেখানে ক্লাস এইট হিসেবে পরবর্তী ক্লাসে না তোলার কোনও ঘর বা অপশন নেই৷ অর্থাৎ ক্লাস এইটে পাশফেল না থাকায় ফরম্যাট অনুযায়ী যারা এইটে পড়ছে তারা সবাই নবম শ্রেণিতে উঠে গিয়েছে৷ অন্যান্য নীচু ক্লাসগুলির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই৷ তাই ফরম্যাটে এই সংক্রান্ত অপশন রাখা হয়নি৷
বহু ছাত্র-ছাত্রী যারা অনেকদিন পর্যন্ত স্কুলে অনুপস্থিত এমনকি কোনও পরীক্ষাতেও বসেনি, নতুন ক্লাসে অ্যাডমিশনও নেয়নি৷ তাদের ছবিও নেই৷ এই ছাত্র-ছাত্রীদের ‘লং অ্যাবসেন্ট’ হিসেবে দেখানোর কোন অপশন নেই৷ তাই পরবর্তীকালে তারা ফের স্কুলে আসতে শুরু করলে ফরম্যাটের ওই জায়গাটা ‘আনলক’ করে তথ্য দেওয়ার অপশন থাকলে, সুবিধা হয় বলেই মত প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা৷ কারণ এদের মধ্যে কোন ছাত্র-ছাত্রী যদি পরবর্তীকালে স্কুলে না আসে সেক্ষেত্রে কিন্তু তাদের প্রোমোটেড দেখিয়ে রোল নম্বর এবং সেকশন দিয়ে দিতে হবে৷ ফলে তথ্যে ভুল থেকেই যাবে৷
'বাংলা শিক্ষা' পোর্টালে তথ্য সংযোগের জন্য, প্রধানশিক্ষক এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে বলেই মত পোষণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক শিক্ষা বিষয়ক কর্মচারী সমিতির সভানেত্রী সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য৷