আজ বিকেল: আজকের দিনে পরীক্ষায় ফেল করলে পড়ুয়ারা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। তাদের ভুলপথে চালিত হওয়ার আগে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়াটাই চ্যালেঞ্জের। এই প্রসঙ্গে এসএসকেএমের মনোবিদ প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, আজকের দিনে অকৃতকার্য পড়ুয়ারা একা একাই সময় কাটায়। চিন্তিত বাবা-মা ছেলেকে অবসাদ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হাতে মোবাইল গুঁজে দেন। পছন্দের গ্যাজেট কিনে দেন। ছেলের সঙ্গে কথা বলার কোনও সময় তাঁদের হাতে নেই। তাই ফেল করার দুঃখ মনে চেপে আরও অসুস্থ হয়ে ওঠে ওই ছাত্ররা। এই পরিস্থিতিতে সে আত্মহননের পথও বেছে নিতে পারে। তবে এমন দুরূহ সমস্যার সমাধানও রয়েছে হাতের মুঠোয়।
মনোবিদ প্রদীপবাবু জানান, এই ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের একটু আন্তরিক হতে হবে। ফেল করা ছেলেকে সহানুভূতি দিয়ে নয়, ফের তার মনের মধ্যে জয় করার বীজ পুঁতে দিতে হবে। পুরনো দিনে এসব সমস্যার কোনও অস্তিত্বই ছিল না। তখন বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্ট জানতে পড়ুয়াদের স্কুলেই যেতে হত। ফেল করলেও দেখা যেত বন্ধুরা পাশে দাঁড়িয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে। কী করে আরও ভালভাবে পরের বছর প্রস্তুতি নিয়ে চোখ ধাঁধানো ফল করা যায় তানিয়ে একপ্রস্থ আলোচনাও হয়ে যায় ওই সময়েই শিক্ষকরাও প্রাথমিক কাউন্সেলিংটা করে দেন। বাড়িতে রাগী বাবা-মা বকতে পারে বলে ভয় পেলেও ঠাকুমা, দাদু, কিম্বা আবদারের জায়গা কাকু, পিসি সেসব দুঃখ ভোলাতে সবসময় তৈরিই থাকেন।
এখন কিন্তু এই সম্পর্কগুলির তার কোথাও ছিঁড়ে গিয়েছে। এঁরা সকলে ফোনে রেজাল্টের খবর নেন। পড়ুয়ারা ইন্টারনেটে আগের দিন রেজাল্ট জেনে যায়। তাই যদি অকৃতকার্য হওয়ার মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটে , সেটাও একাই দেখতে হয়। মন ভেঙে যায়, স্কুলে গিয়ে শুধু মার্কশিট নিয়ে হয়। এখনকার দিনে শিক্ষক ছাত্রের মধ্যে সম্পর্কটা কেমন ক্রেতা বিক্রেতার পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। কোথাও সেদিনের আন্তরিকতাটা যেন আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই পারিবারিক কাউন্সেলরের জায়গা ভরাট করতেই আশপাশে মনোবিদদের ভিড় জমেছে। ছেলেমেয়ে ফেল করে অবসাদ ভুগছেন, কর্মব্যস্ত বাবা-মা তাদের নিয়ে চলে এলেন মনের ডাক্তারের কাছে। ছেলেমেয়ে যে আদৌ কি চায় তা বোঝার চেষ্টাই করলেন না। বোর্ড এগজামে অকৃতকার্য হওয়ার দুঃখ ভোলায় একান্নবর্তী পরিবার।