মাত্র ১ লিটার জলে বেড়ে উঠছে ৫০ হাজার গাছ, নয়া ফর্মুলা কৃষকের

মাত্র ১ লিটার জলে বেড়ে উঠছে ৫০ হাজার গাছ, নয়া ফর্মুলা কৃষকের

জয়পুর : একটি গাছকে বড় করে তুলতে এক লিটার জলই কাফি৷ এমন কথা বললে অনেকেই ভাববেন পাগলের প্রলাপ৷ কিংবা ভাবতে পারেন লোকটি প্রতারক৷  সুন্দররাম বর্মার সম্পর্কেও এমনটাই ভেবেছিলেন তাঁর  গ্রামের মানুষ৷

রাজস্থানের সিকার জেলার ছোট্ট গ্রাম দান্তা৷ এই গ্রামের শুখা মাটিতেই অনন্য কৌশলে সুন্দররাম বড় করে তুলছেন ৫০ হাজার গাছ৷ প্রতিটি গাছের জন্য তিনি বরাদ্দ করেছেন মাত্র এক লিটার জল৷    
বেশ কিছু বছর আগে ঘটনার সূত্রপাত৷ ওই বছর বর্ষায় নিজের ১৭ একর পৈতৃক জমির উপর গড়ে ওঠা ফার্মের সীমান্ত জুড়ে গাছ লাগিয়েছিলেন বর্মা৷ প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত জলও দিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু পরের বছর গরম পড়তেই গাছগুলি শুকিয়ে যায়৷ বিকল্প না পেয়ে বর্ষায় ফের মাটি খোঁড়েন তিনি৷ সেবার নিম, লঙ্কা এবং ধনে গাছের চারা লাগান সুন্দররাম৷ তবে এবার আর সীমারেখা বারবার নয়, চারাগাছগুলি পোতেন ফার্মের মাঝামাঝি অবস্থিত তাঁর বাড়ি লাগোয়া অংশে৷ এই জমিতে ধান, ডাল, শস্য, ফলমূল এবং সবজি চাষ করতেন তিনি৷ কিন্তু মরশুম শুরু হতেই দানা শস্য নিয়ে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন৷ চারাগাছে জল দেওয়ার কথা একপ্রকার ভুলেই যান সুন্দররাম৷

কিছুদিন পর চারাগাছগুলিকে বেড়ে উঠতে দেখে হতবাক হয়ে যান বর্মা৷ এক ফোঁটা জল ছাড়া চারগাছগুলি কীভাবে বেড়ে উঠছে, প্রশ্ন জাগে তাঁর মনে৷ এরপরই বেশ কয়েক মাস মাটি খনন, গাছ লাগানো এবং জমি ভারাট নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন৷ তিনি বুঝতে পারেন মাটিতে সঞ্চিত বৃষ্টির জলই এই গাছগুলিকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে৷ বৃষ্টির জল মাটিতে ধরে রেখে শুখা মরশুমে বীজ উৎপাদন সম্ভব৷

ইতিমধ্যে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সহযোগিতায় ইন্ডিয়ান এ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ ইন্সটিটিউটে শুষ্ক জমিতে চাষাবাসের উপরও একটি কোর্স করেন বর্মা৷ ৬৮ বছরের এই প্রবীন বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে ও আরও বেশি শস্য ফলাতে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম৷ সেখান থেকেই আমাকে পরামর্শ দেওয়া হয় শুষ্ক জমিতে কীভাবে চাষ করতে হয়, সেই বিষয়ে পড়াশোনা করতে৷ দু’মাসের এই কোর্স আমাকে অনেকটা পরিণত করে৷ এক লিটার জলের ফর্মুলা আবিষ্কারেও অনেকটা সাহায্য করেছে৷ ১০ বছরের প্রচেষ্টার পর সব রকম গাছ এই ফর্মুলায় চাষ করতে সফল হয়েছেন সুন্দররাম৷  

বর্মার ফর্মুলা-
১. বৃষ্টির জল ধরে রাখতে সবার আগে জমি সমান করে নিতে হবে৷ দেখতে হবে যেন কোনও ঢাল না যাকে৷  
২. মরশুমের প্রথম বৃষ্টির পাঁচ-ছ’ দিন পর জমিতে লাঙল দিতে হবে৷ তবে গভীর নয়, মাত্র এক ফুট খনন করে আগাছা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে৷ যাতে বৃষ্টির জল মাটির ভিতরে ঢুকতে পারে৷
৩.বৃষ্টি শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই গভীরভাবে মাটি খনন করতে হবে৷
৪. দ্বিতীয়বার খননের পর জমিতে প্রায় এক ফুট গভীর ও চার-পাঁচ ইঞ্চি চওড়া গর্ত খুঁড়তে হবে৷
৫. এই গর্তগুলিতেই চারাগাছ লাগাতে হবে৷ দেখতে হবে গাছের শিকর যেন ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ সেন্টিমিটার গভীরে থাকে৷ এর পর ভিজে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবেচারাগাছগুলিকে৷
৬. সর্বশেষ দাওয়ই, ওই গর্তে ঢেলে দিতে হবে এক লিটার জল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 4 =