কলকাতা: রাজ্যে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের গ্রাফ৷ পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামীকাল থেকে রাজ্যের সমস্ত স্কুল ফের বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল সরকার৷ দীর্ঘ ১১ মাস বন্ধ থাকার পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল স্কুলের দরজা৷ কিন্তু করোনা পরিস্থিতি বেলাগাম হতেই ফের স্কুল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল৷
আরও পড়ুন- করোনার কোপে এবার জয়েন্ট, পিছিয়ে গেল পরীক্ষা
প্রসঙ্গত, গত বছর মার্চ মাস থেকেই বন্ধ রয়েছে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ তবে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চালু করা হয়েছিল৷ কিন্তু পরিস্থিতি জটিল হতেই ফের স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত৷ এখনও গরমের ছুটি পড়েনি৷ এক্ষেত্রে সেই ছুটিই এগিয়ে আনা হল বলে জানানো হচ্ছে৷ যে ভাবে চারিদিকে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, যে ভাবে আছড়ে পড়েছে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ, তাতে স্কুল খুলে রাখা ঠিক বলে মনে করছে না রাজ্য সরকার৷ সম্ভবত আজই এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানা গিয়েছে৷ ফলে নবম থেকে দ্বাদশের সমস্ত ক্লাসই বন্ধ হয়ে যাবে৷ শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও স্কুলে আসতে হবে না৷ এ প্রসঙ্গে গরমের ছুটি এগিয়ে আনার কথা বলা হলেও, যতদিন না কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, ততদিন স্কুল বন্ধ থাকবে৷ বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার আগামীকাল থেকে সমস্ত স্কুলে গ্রীষ্মকালীন ছুটি ঘোষণা করেছে৷ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আজ জানিয়েছেন, পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না দেওয়া পর্যন্ত এই ছুটি বহাল থাকবে৷ উল্লেখ্য করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় রাজ্যের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে পঠন-পাঠন শুরু হয়েছিল৷
ইতিমধ্যেই দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করেছে সিবিএসই৷ স্থগিত করা হয়েছে দ্বাদশ৷ স্থগিত করে হয়েছে জেইই মেন৷ তবে রাজ্যে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷ কারণ এই দুটি পরীক্ষা রয়েছে জুন মাসে৷ এদিকে, রাজ্যে একদিনে আক্রান্ত ৮ হাজার পার৷ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও আক্রান্ত হচ্ছেন কোভিডে৷ সকলের মধ্যেই একটা আতঙ্ক কাজ করছে৷ এই পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের জীবনকেই আগে গুরুত্ব দেওয়া হল৷
আরও পড়ুন- ছ’টি আলাদা বিষয়ে UGC নেট উত্তীর্ণ হয়ে বিরল কৃতিত্ব গড়লেন শিক্ষক!
রাজ্যে উদ্ভূত করোনা সংকট মোকাবিলায় সার্বিক রণকৌশল তৈরি করতে রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত দফতরের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে আজ বৈঠক করে কোভিড মোকাবিলার রূপরেখা তৈরি করবেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে টুইট করে জানিয়েছেন, কোভিড সংকট মোকাবিলায় প্রশাসনকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। রাজ্যের মানুষের জীবন রক্ষার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ করছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওষুধ এবং টিকার ডোজ চেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘বর্তমানে অতিমারিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি নিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল থেকে সমস্ত বিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটির সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি৷ বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে মিটিং-মিছিল, সমাবেশ, শপিংমল, মেলা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি ক্ষেত্রেও যে বিপুল জনসমাগম হচ্ছে তাকেও নিয়ন্ত্রণ করা হোক৷ এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য সমস্ত কিছু স্বাভাবিক রেখে যদি শুধুমাত্র বিদ্যালয়গুলি বন্ধ রাখা হয়, তাহলে মানুষের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে৷ সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক৷’’ মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে সারা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি যেভাবে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত বলেই আমার মনে হয়েছে৷’’