হরিয়ানা: লক্ষ্য শিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ইঁদুর দৌড়ে হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব৷ এক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির যা ফরমিকা তার থেকেও বড় ভূমিকা অভিভাবকদের৷ শিশুর জন্মের মাত্র দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে যাচ্ছে স্কুলে ভর্তি করার প্রতিযোগিতা৷ একেবারে দুধের শিশুগুলোকে আন্টি আর ক্লাস টিচার এর হাতে তুলে দিয়ে এসে ভীষণরকম প্রশান্তি পান অভিভাবকরা৷ মনে করেন ভবিষ্যতে চিন্তা রইল না৷
কিন্তু যে বয়সে মায়ের কোলে বসে আদর খাওয়া, বায়না করার কথা সেই বয়সে কম করে তিন ঘণ্টা রুটিনমাফিক স্কুলে থাকা একটি শিশুর সুন্দর এবং সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়তে কতটা সহায়ক ইতিমধ্যেই তা তা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে৷ ভালো-মন্দ দ্বিমত থাকলেও এই এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে আদপে শিশুদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছে আমরা৷ এ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে আমাদের দেশেও৷
এবছরের শুরুতেই এবিষয়ে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে দিল্লি সরকার৷ ছোটদের স্কুলে ভর্তি করার ক্ষেত্রে বয়স সীমা বেঁধে দেওয়া হয় চার বছর থেকে৷ অর্থাৎ শিশুরা স্কুলে নয় বরং মাতৃ ক্রোড়েই সুন্দর৷ এবার এই একই পথ অনুসরণ করল হরিয়ানা সরকার তবে আরও এক ধাপ এগিয়ে পাঁচ বছরের আগে কোন শিশুকেই স্কুলে ভর্তি করা যাবে না এমনই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে হরিয়ানা সরকারের তরফে৷ অর্থাৎ বেসরকারি স্কুলগুলিতে বন্ধ হয়ে যাবে নার্সারি, লোয়ার কেজি ও আপার কেজি ক্লাস৷
রোহতাকের এলিমেন্টারি এডুকেশন অফিসার বিজয়লক্ষ্মী নাদাল সংবাদ সংস্থা এএনআইকে সরকারের এই পদক্ষেপের কথা জানিয়ে বলেন, শিশুদের খেলাধুলা এবং মানসিক বৃদ্ধির জন্য প্রচুর সময় দরকার৷ সেই কথা মাথায় রেখেই সরকার নার্সারি, আপার কেজি এবং লোয়ার কেজি ক্লাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷” নাদাল বলেন একটি শিশুর পাঁচ বছর বয়স হওয়ার পরেই তাকে স্কুলে ভর্তি করা উচিত, যাতে তার মানসিক বিকাশ সুষ্ঠুভাবে হয়৷ তিনি আরো বলেন পাঁচ বছর হওয়ার আগে পর্যন্ত শিশুদের অঙ্গনওয়াড়ি বা প্লে স্কুলগুলিতে যাওয়া উচিত যেখানে খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়৷
হরিয়ানায় অন্তত ৮,৫০০টি বেসরকারি স্কুল আছে৷ সরকারের এই নির্দেশিকা পাওয়ার পরেই সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছে বেসরকারি স্কুল অ্যাসোসিয়েশন গুলি৷ তাদের মতে সরকারি স্কুলগুলিকেও একইভাবে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে৷ সরকারের এই সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক সে ক্ষেত্রে এই নির্দেশিকা তুলে না নেওয়া হলে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবে বেসরকারি স্কুলগুলি৷
এর আগে হরিয়ানার শিক্ষা মন্ত্রী কানওয়ার পাল বলেছিলেন প্রাক প্রাথমিক স্তরে বাচ্চাদের মানসিক ক্ষমতা এবং উৎকৃষ্টতার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলে৷ শিক্ষাবিদরা হরিয়ানা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন এক্ষেত্রে প্রাথমিক স্কুল গুলির মানোন্নয়নের করতে হবে যেখানে ক্ষুদে পড়ুয়ারা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলো বা অন্যান্য গঠন মূলক কাজের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠতে পারে৷ কারণ শিশুদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে শুধুমাত্র পড়াশোনার চাপের মধ্যে তাদের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হলে সেক্ষেত্রে সুস্থ মানসিক গঠন ব্যাহত হতে পারে৷