লুধিয়ানা: ১৫ বছর আগে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে পারি দিয়েছিলেন বিদেশের মাটিতে৷ সেখানে গিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু পড়াশোনা যেন তাঁর পিছু ছাড়েনি৷ আর সেকারণে ফের একবার অসম্পূর্ণ পরীক্ষা সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি৷ শুনে অবাক লাগলেও বছর ৩৩-এর মনপ্রিত সিংয়ের এটাই এখন মূল লক্ষ্য৷
পঞ্জাবের লুধিয়ানার ঝোরন গ্রামের বাসিন্দা মনপ্রিত পঞ্জাব স্কুল এডুকেশন বোর্ডের (পিএসইবি) অন্তর্গত গ্রামেরই একটি সরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন৷ ২০০৪ সালে উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজি পরীক্ষায় ৭৫ নম্বরের মধ্যে ১৫ নম্বর পান৷ ফের পরীক্ষায় বসলেও তিনি পাশ করতে পারেননি৷ অবশেষে লুধিয়ানার ইন্ডাসট্রিয়াল ট্রেনিং ইন্সটিটিউসন থেকে প্লাম্বিংয়ের একটি কোর্স করেন৷ দু’বছর নিজের এলাকায় একজন প্লাম্বার হিসাবে কাজ করেন তিনি৷ তারপর বাবার সঙ্গে ক্ষেত মজুরের কাজ শুরু করেন৷ ২০১০ সালে তাঁর এলাকার একাধিক বাসিন্দার মতো মনপ্রিতও জীবিকার খোঁজে ইতালি পারি দেন৷
সেখানে তিনি কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ শুরু করেন৷ বিদেশের মাটিতে মনপ্রিতের মাসিক ইনকম ছিল ৭০ থেকে ৯০ হাজার৷ যা ভারতে বিভিন্ন শিক্ষিত ছেলে কিংবা মেয়েদের থেকে অনেকটাই বেশি৷ কিন্তু তাতেও যেন খুশি ছিলেন না মনপ্রিত৷ কারণ মনপ্রিতের কথায়, তাঁর আশপাশের সকলেই উচ্চমাধ্যমিক পাশ ছিলেন৷ কিন্তু তিনি সেই পরীক্ষায় দু’বার চেষ্টা করেও উত্তীর্ণ হতে পারেননি৷
তাই ইতালির পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে ফের একবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মনপ্রিত৷ কিন্তু ১৫ বছর পর তা কী করে সম্ভব! মনপ্রিতের এই বছর পুরানো ইচ্ছাপূরণের সূবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে পিএসইবি৷ চলতি বছরের ১৬ অগাস্ট বোর্ডের তরফে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়৷ যেখানে বলা হয় ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিকে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী একাধিকবার পরীক্ষা দিয়েও সফল হতে পারেনি, তারা ‘সাপ্লিমেন্টরি গোল্ডেন চান্স’ পরীক্ষার দ্বারা নিজেদের আশা পূরণ করতে পারবে৷ বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিখ ধর্ম প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের ৫৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই সূবর্ণ সুযোগের ঘোষণা করা হয়েছে৷ পরীক্ষার আবেদন করার জন্য ১৫,০০০ টাকা ফি জমা দিতে হবে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে৷ এরপর মনপ্রিতের মতো প্রায় ৪০০০ জনের আবেদন পত্র জমা পরে বোর্ডের কাছে৷ তাঁদের উৎসাহ দেখে আবেদন পত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বাড়িয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর করার সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড কর্তৃপক্ষ৷
এবারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য জোড়কদমে পড়াশোনা শুরু করেছেন মনপ্রিত৷ রোজ দিনে ৪-৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করেন তিনি৷ লক্ষ্য একটাই এবারের পরীক্ষায় ৬৫ নম্বরের মধ্যে ২২ নম্বর তাঁকে পেতেই হবে৷ এদিকে তাঁর একাগ্রোতা দেখে পরিবারের সকলের আশা এবারের পরীক্ষায় মনপ্রিত নিশ্চয়ই উত্তীর্ণ হবেন৷ মনপ্রিতের কথায় ১৫ বছর আগে শুধু ইংরেজি নয় তাঁকে পাঠ্যক্রমের বাকি বিষয়গুলিতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য পড়াশোনা করতে হয়েছিল৷ কিন্তু এবার শুধু ইংরেজি তাঁর একমাত্র ধ্যান-জ্ঞ্যান৷ ৮ বছর বিদেশের মাটিতে থাকার দরুন মনপ্রিত ইংরেজির থেকেও ভালোভাবে ইতালি লিখতে এবং বলতে পারেন৷ এবার শুধু ইংরেজির পালা৷ এমন অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা অনেকসময় ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের পড়াশোনা মাঝপথেই ছেড়ে দেয়৷ সেখানে মনপ্রিতের মতো ছাত্রও রয়েছে যাঁরা পড়াশোনার টানে বিদেশের সুরক্ষিত চাকরি ছেড়ে দেশে ফেরেন৷ কথায় আছে পড়াশোনার কোনও বয়স হয় না৷ মনপ্রিত সেই কথাটিকেই আজ সত্যি করে দেখাতে চলেছে৷