তিনি ছিলেন বলেই আজ এত পরিসংখ্যান চর্চা! স্মরণে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ

তিনি ছিলেন বলেই আজ এত পরিসংখ্যান চর্চা! স্মরণে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ

নয়াদিল্লি: সাহিত্য, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, আঙিনা যেমনই হোক না, নতুন ভারত গড়ার বা বিশ্বের দরভারে এদেশকে গৌরবান্বিত করতে বাঙালিই সবার আগে। প্রথম নোবেল, প্রথম অস্কার (একমাত্রও বটে) ভারতকে এনে দিয়েছেন দুই বাঙালি। আবার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্যেন্দ্রনাথ বসু, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মেঘনাদ সাহাদের নাম চিরস্মরণীয়। এই নামগুলির মধ্যে একজনের কথা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই, তিনি প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ। ভারতীয় স্ট্যাটিস্টিক্স বা পরিসংখ্যান বিদ্যার জনক প্রশান্তচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল আজকের দিনেই।

আজ থেকে ১২৮ বছর আগে ২৯ জুন জন্ম হয়েছিল তাঁর। এই দিনটিকে তাঁর সম্মানে জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। যে কোনও পণ্যে ‘আইএসআই’ ছাপ মারা দেখলে আমরা তার গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হই। এই আইএসআই বা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইউনিটের জন্ম হয় প্রশান্তের হাত ধরেই।

ঠাকুর্দা গুরুচরণ মহলানবিশের প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম বয়েজ স্কুলে পড়াশোনা করেন প্রশান্ত। এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজে ১৯১২ সালে পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্নাতক হন। এরপর কেমব্রিজের বিখ্যাত কিংস কলেজেও পড়াশুনো করেন তিনি। এই কিংস কলেজেই গণিতশাস্ত্রের ভারতীয় বিস্ময় প্রতিভা শ্রীনিবাস রামানুজমের সঙ্গে দেখা হয় প্রশান্তের।

প্রথমে কিছুদিন পদার্থবিদ হিসেবে ইংল্যান্ডের এক পরীক্ষাগারে কাজ করার পর দেশে ফিরে আসেন প্রশান্ত। প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যায় অধ্যাপনার ভার নেন ১৯২২ সালে। ৩০ বছর চলে অধ্যাপনার কাজ। কিছুদিনের জন্য প্রেসিডেন্সির অধ্যক্ষ পদেও বহাল ছিলেন তিনি। এরপর পরিসংখ্যান বিদ্যায় উৎসাহী কিছু ব্যক্তিদের নিয়ে একটি দল গড়েন, যা পরে ব্যাপকতা নেয় এবং নাম হয় ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইউনিট (আইএসআই)। এরপর একই বিষয়ে একটি মুখপত্রও চালু করেন যার নাম ছিল ‘সাংখ্য’।

স্বাধীনতার পর দেশের বেশ কিছু মহা গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞের প্রধান পুরুষ ছিলেন প্রশান্ত। ১৯৫০ সালে ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভের (জাতীয় নমুনা সমীক্ষা) প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর হাত ধরে জন্ম নেওয়া আইএসআই ১৯৫৯ সালে জাতীয় গুরুত্বের তকমা পায়। বিভিন্ন রকম জনসমীক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর উদ্ভব করা কৌশলের সাহায্যেই কাজ উদ্ধার করেছে ভারত সরকার। ১৯২৬ সালে ওড়িশায় বন্যা হওয়ার পর তিনি একটি সার্ভে করেন। সেই সার্ভের ফলস্বরূপ মহানদীতে হীরাকুঁদ বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এমন আরও বহু অবদান রয়েছে বাংলার এই কীর্তিমান পুরুষটির। আজ জন্মদিনে তাঁকে সশ্রদ্ধ প্রণাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 3 =