নিজস্ব প্রতিনিধি: টাটা বাই বাই করে ২০২২ সাল বিদায় নিয়েছে। প্রতিটি বছর শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেটি কিছু স্মৃতি রেখে যায়। ২০২২ সালও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে গত বছরটি পশ্চিমবঙ্গের কাছে একেবারেই সুখকর হয়নি। চতুর্দিকে শুধুই পাওয়া গিয়েছে দুর্নীতির গন্ধ। শিক্ষক নিয়োগ থেকে কয়লা পাচার, গরু পাচার বা আবাস যোজনা দুর্নীতি, পশ্চিমবঙ্গের আকাশে দুর্নীতির কালো মেঘ গত বছর থেকেই বেশ জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে। তবে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে সেটাই সবচেয়ে আলোচিত বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আবহের মধ্যে বাগদেবীর আরাধনায় মেতে উঠেছে গোটা বাংলা। কিন্তু এমন একটা সময়ে পশ্চিমবঙ্গে এবার তিনি আসছেন তা একেবারেই দেবী সরস্বতীর সঙ্গে মানানসই নয়। পড়াশোনা, শিল্পকলা, গান-বাজনা-সহ সার্বিক ভাবে সমস্ত ধরনের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকেই দেবী সরস্বতীর আরাধনা করে থাকেন। কিন্তু যেভাবে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে তার ডালপালা মেলেছে, তাতে দেবী সরস্বতী এই পরিস্থিতির সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন, এবার পুজোর দিন বঙ্গ সমাজকে কী বার্তা দিতে পারেন বিদ্যার দেবী?
দেবীর বার্তা সম্ভবত এটাই হতে পারে যে, “কেউ নকলের আশ্রয় নিও না। ঠিকঠাক ভাবে পরীক্ষা দাও। তাতে ফেল করলেও ক্ষতি নেই। ফেল করাটাও জীবনের শিক্ষা। সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়ানো যায়। কিন্তু দোহাই লক্ষ লক্ষ টাকার বান্ডিল দেখিয়ে কেউ শিক্ষক হতে যেও না!” আসলে এটাই তো বাংলা তথা গোটা দেশের মনের কথা। কলকাতা হাইকোর্ট যদি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ না দিত তাহলে এই চুরি সম্ভবত ধরা পড়ত না। পুকুর চুরি নয়, রীতিমতো সমুদ্র চুরি হয়েছে এখানে। অতি প্রাচীন প্রবাদ আছে, চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা! কটাক্ষ করে দুর্নীতিগ্রস্তদের এমনটাই বলা হয়। তবে সেই কাজ করতে গিয়ে বাংলায় ধরা পড়ে গিয়েছেন হাজার হাজার ভুয়ো শিক্ষক।
এই অবস্থায় বাংলার প্রতিটি কোণে সরস্বতী পুজো হচ্ছে। তার মধ্যেই শিক্ষক দুর্নীতিকে ‘থিম’ করে কাঁকুড়গাছির একটি পুজোর প্যান্ডেল তৈরি হয়েছে। এটা একটা বিচ্ছিন্ন প্রতীকী প্রতিবাদ। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বলছে প্রত্যেকটি পুজো মণ্ডপে কমবেশি শিক্ষক দুর্নীতির প্রসঙ্গে আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে। যেটা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে অতীতে কোনও দিন দেখা যায়নি। এই রাজ্যের মানুষ অতীতে প্রচুর রাজনৈতিক সন্ত্রাস দেখেছে, দেখেছে পুলিশি অত্যাচার, দেখেছে নকশাল আমলের কালো অধ্যায়, কিন্তু লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শিক্ষকের চাকরি বিক্রি হচ্ছে এমন দৃশ্য এই বাংলা কোনও দিন প্রত্যক্ষ করেনি। এই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির আবহের মধ্যেই দেবী সরস্বতীর আরাধনা চলছে। তবে সৎ, নিষ্ঠাবানরা দেবীর আশীর্বাদ পাবেন এই আশাই করছেন সবাই।