উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করানোর দাবিতে অকৃতকার্যদের বিক্ষোভ, কিন্তু কেন এত বিদ্রোহ?

উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করানোর দাবিতে অকৃতকার্যদের বিক্ষোভ, কিন্তু কেন এত বিদ্রোহ?

কলকাতা: যত কাণ্ড ফেল করা ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে! একজন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ইংরেজিতে আমব্রেলা বানানটি পর্যন্ত শুদ্ধ বলতে পারছেন না। প্রত্যাশিতভাবেই সেই ছাত্রী ইংরেজিতে ফেল করেছেন। কিন্তু পাশ করানোর দাবিতে তিনিও বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। আবার ইংরেজিতে ফেল করা অন্য এক ছাত্রীর অভিভাবকের সংবাদমাধ্যমের কাছে যুক্তি, অন্যের মেয়ে বাংলায় এসএমএস করে। আমার মেয়ে ইংরেজিতে এসএমএস করে। তাহলে আমার মেয়ে কি করে ইংরেজিতে ফেল করল? এরকম হাস্যকর উদাহরণ  বহু আছে। সবমিলিয়ে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন তাঁদের বড় অংশ পাশ করানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন রাজ্য জুড়ে।

এমনকী পাশ করানোর দাবিতে যশোর রোড অবরোধ করে আত্মহত্যার হুমকি পর্যন্ত দিলেন বনগাঁ কুমুদিনী স্কুলের পড়ুয়ারা। ওই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও পড়ুয়াদের দাবি, তাঁদের সকলকে পাশ করিয়ে দিতে হবে। এই দাবি না মানলে রাস্তায় বসে অনশন আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন পড়ুয়ারা। হুগলির চুঁচুড়াতেও পাশ করানোর দাবিতে বিক্ষোভ চলে। চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ছাত্র-ছাত্রীরা। দেশবন্ধু গার্লস নারী শিক্ষামন্দির, জ্যোতিষচন্দ্র বিদ্যাপীঠ-সহ বেশ কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা পাশ করানোর দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেছেন। অবরোধের জেরে তীব্র যানজটের মধ্যে পড়ে চরম ভোগান্তি হয় সাধারণ মানুষের। বীরভূমের সাঁইথিয়াতেও একই ইস্যুতে ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ চলে। সেখানে শশীভূষণ দত্ত  বালিকা বিদ্যালয়ের ৩১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৯০ জনই অকৃতকার্য হয়েছেন। স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। সকলকে পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে সাঁইথিয়া-লাভপুর চৌহাট্টা যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করেন তাঁরা। পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর ব্লকের একাধিক স্কুলের অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীরা পাশ করানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখান রাস্তা অবরোধ করেন। একটি স্কুলের ৬২ জন ছাত্রী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৪৪ জন অকৃতকার্য হয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে ইতিহাসে ফেল করেছেন। ছাত্রীদের অভিযোগ একটি বিষয়ে এত জন ফেল করতে পারে না। উত্তরপত্র ঠিকঠাক দেখা হয়নি বলেই ফেল করেছেন তাঁরা, এই অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অকৃতকার্য ছাত্রীরা।

এদিকে বনগাঁর কুমুদিনী স্কুলের ২৭৯ জন এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে  ৩৭ জন পরীক্ষার্থী ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয়ে ফেল করেছেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই সিলেবাসে একাধিক পরিবর্তন করা হয়েছে। কখনও অনলাইন, আবার কখনও অফলাইনে পরীক্ষা দিতে হবে বলে জানানো হয়েছিল তাঁদের। এই টালবাহানায় তাঁদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি সকলেই এক বিষয়ে ফেল করতে পারেন না। একইভাবে সোমবার বারাসত প্রিয়নাথ গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রীরাও অকৃতকার্য হওয়ায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ওই স্কুলের ৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জন অকৃতকার্য হয়েছেন। অভিযোগ ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়েছে তাঁদের। এই অভিযোগে ওই স্কুলের ছাত্রীরা যশোর রোডে বিক্ষোভ দেখান রাস্তা অবরোধ করেন। এর পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করতে লেকটাউনের কালিন্দীতে বিক্ষোভকারীরা আসার চেষ্টা করেন। তখন লেকটাউন থানার পুলিশ পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। রাজারহাটেও পাশ করানোর দাবিতে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ হয়। রাজারহাট চৌমাথায় ছাত্রছাত্রীরা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বচসা শুরু হয়ে যায়।

গত বছরও একই ঘটনা দেখা গিয়েছিল। উচ্চ মাধ্যমিক ফল প্রকাশের পর পরীক্ষার্থীদের একটা অংশ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। স্কুল বিল্ডিং ভাঙচুরের পাশাপাশি রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন তাঁরা। পরবর্তীতে দেখা যায় উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল রিভিউয়ের পর সবাইকে পাশ করিয়ে দিয়েছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। গত বছর ১৪ হাজারের বেশি  রিভিউয়ের আবেদন জমা পড়েছিল। তৎকালীন সংসদ সভানেত্রীর সঙ্গে নবান্নের বৈঠকের পর অকৃতকার্যদের পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর সেই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে কি এবারেও গতবারের মতো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে? সেই লক্ষ্যেই কি অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীরা এভাবে অবরোধ আন্দোলন শুরু করেছেন? এর আগে অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে কলেজ পড়ুয়াদের বিক্ষোভ দেখেছে রাজ্যবাসী। শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত একাংশ মনে করেন ঘরে বসে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলে টোকাটুকি করেই পরীক্ষা দেবেন অধিকাংশ পড়ুয়া। আর সেই কারণেই অনলাইনে পরীক্ষার দাবিতে এত বিক্ষোভ হয়েছে রাজ্যজুড়ে। স্বাভাবিকভাবেই পড়াশোনা ও ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে এই সমস্ত অনভিপ্রেত ঘটনার জেরে।‌

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =