নিজস্ব প্রতিনিধি: পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। বাংলার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতিদান উপলক্ষে ১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশাল পদযাত্রা হয়েছে কলকাতায়। মুখ্যমন্ত্রীকে সেদিন বলতে শোনা গিয়েছে, পুজো শুরু হয়ে গেল। আর বিশ্বকর্মা পুজো হয়ে যাওয়ার পর পুজো কার্যত দরজায় কড়া নাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে শহর তথা জেলার স্কুলগুলি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রি-টেস্ট পরীক্ষাকে। বহু স্কুলে ইতিমধ্যেই প্রি-টেস্ট হয়ে গিয়েছে। আবার অনেক স্কুল দুর্গাপুজোর আগেই প্রি-টেস্ট শেষ করে ফেলতে চায়। আর প্রত্যেকটি স্কুলের মোদ্দা কথা এটাই যে, প্রি-টেস্ট পরীক্ষাকে অন্যবারের চেয়ে এবার অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কি কারণ রয়েছে সেখানে?
আগামী বছর যাঁরা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন তাঁদের মাধ্যমিক দিতে হয়নি। কারণ অতিমারি করোনার জন্য ২০২১ সালে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক দুটি পরীক্ষাই বাতিল হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ আগামী বছর যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক দিতে চলেছেন সেটাই তাঁদের কাছে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা হতে চলেছে। তাই উচ্চমাধ্যমিকের আগে প্রি-টেস্টকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে শহর তথা জেলার স্কুলগুলি। উচ্চমাধ্যমিকে বসতে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা যাতে আতঙ্কিত বা অপ্রস্তুত অবস্থায় না পড়েন সেই লক্ষ্যেই টেস্ট পরীক্ষার পাশাপাশি প্রি-টেস্টকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে স্কুলগুলি। শিক্ষক-শিক্ষিকরা মনে করছেন যেহেতু তাঁরা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারেননি করোনার কারণে, তাই উচ্চমাধ্যমিকে বসতে গিয়ে যাতে কেউ আত্মবিশ্বাস না হারান সেই লক্ষ্যেই প্রি-টেস্টকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে বহু স্কুলে এখনও প্রি-টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। সেখানে পুজোর আগেই প্রি-টেস্ট নেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা। কারণ নভেম্বরে টেস্ট পরীক্ষা করতেই হবে। তার আগে উৎসবের মরশুমে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে স্কুল। তাই দ্রুত প্রি-টেস্ট পরীক্ষা নিতে চাইছে স্কুলগুলি।
এছাড়া প্রি-টেস্ট পরীক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার আরও একটি কারণ উঠে আসছে। সেটি হল করোনা আতঙ্ক। বর্তমানে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। কমে গিয়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। বহুদিন ধরেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু করোনা নতুন করে মারাত্মক আকার ধারণ করে ফের যে আছড়ে পড়বে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সকলেরই জানা আছে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এতটাই কমে যায় যে জনজীবন সর্বত্র স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। সেই সময় দেশজুড়ে টিকাকরণ কর্মসূচি চালু হয়ে গেলেও সেটি নিতে আগ্রহী ছিলেন না রাজ্য তথা দেশবাসী। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই করোনার নতুন ঢেউ আছড়ে পড়ে। করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার নেয় বঙ্গে।
রাতারাতি টিকা দেওয়ার জন্য মানুষের হুড়োহুড়ি পড়ে যায় শহর তথা রাজ্য জুড়ে। বহু জায়গায় টিকা নেওয়ার জন্য বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর কয়েক মাস পর ফের করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে ওমিক্রন প্রজাতির দাপটে করোনার ঢেউ আবার মাথাচাড়া দেয় বাংলা জুড়ে।চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ফের সেটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছে নতুন করে আগামী বছর করোনার মারাত্মক প্রভাব যদি পুনরায় দেখা দেয় তাহলে হয়ত পরিস্থিতির বিচারে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পিছিয়ে যেতে পারে। অথবা পরীক্ষা না হয়ে আগের মতো বিকল্প মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হতে পারে। তাই প্রত্যেকটি স্কুল বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে প্রি-টেস্ট এবং টেস্ট পরীক্ষাকে। সেক্ষেত্রে এই দুটি পরীক্ষার নম্বর দেখে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করা হবে। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এই দুটি পরীক্ষার দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। আসলে গত দু’বছরে করোনার মতিগতি দেখে সামান্য হলেও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে নভেম্বরের আগে প্রি-টেস্ট এবং টেস্ট পরীক্ষা নির্বিঘ্নে সেরে নিতে চাইছে সমস্ত স্কুল।