জলপাইগুড়ি: করোনা আবহে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুল৷ লাটে উঠেছে পঠন-পাঠন৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ভার্চুয়াল ক্লাস চালু হলেও তার সাফল্য নিয়ে রয়েছে একাধিক প্রশ্ন রয়েছে৷ শহর অঞ্চল কিংবা শহরতলীর এলাকার পড়ুয়ারা ভার্চুয়াল ক্লাসের সুবিধা পেলেও দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছিলেন গ্রামবাংলার কয়েক কোটি পড়ুয়া৷ গ্রামবাংলার সেই সমস্ত পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ গড়তে এবার নিজেদের উদ্যোগে খোলা মাঠে পাঠশালা খুলে নজির গড়লেন ৪ প্রাথমিক শিক্ষক৷ গাঁটের টাকা খরচ করে বাইক ছুটিয়ে নিয়মিত পাঠশালা গ্রামীণ পড়ুয়াদের ক্লাস নিচ্ছেন জলপাইগুড়ি রাজবাড়িপাড়ার প্রাথমিক স্কুলের ৪ শিক্ষক৷
করোনা রুখতে দীর্ঘ লকডাউনের ঘোষণা করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার৷ করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে৷ কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকলে কীভাবে পড়বে পড়ুয়ারা?
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে ‘ই-প্রচার’ শুরু হলেও গ্রাম বাংলার ছবিটা এখনও ভিন্ন৷ করোনা সংক্রমণ রুখতে লকডাউনে ঘোষণার আগে থেকেই সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ হলেও রাজ্য শিক্ষা দফতরের তরফ অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে৷ কিন্তু গ্রামবাংলায় আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের কাছে স্মার্টফোন কিংবা ইন্টারনেট কানেকশন থাকাটা আকাশকুসুম স্বপ্ন৷ ফলে, অনলাইনে ক্লাসে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই৷ স্কুল খোলা না পর্যন্ত পঠনপাঠনেও তালা ঝুলে গিয়েছে৷ আর এই পরিস্থিতির কথা ভাবে জলপাইগুড়ি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাজবাড়ি আরআর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষক এগিয়ে আসেন৷ প্রথম উদ্যোগটা নিয়েছিলেন শিক্ষক স্বপন বসাক৷ নিজের উদ্যোগে স্থানীয় মাঠে পড়ুয়াদের নিয়ে পাঠশালা খোলার ব্যবস্থা করেন তিনি৷
এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে স্বপন বাবু জানিয়েছেন, অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার হচ্ছে ঠিক৷ কিন্তু তা কতটা কার্যকর হচ্ছে, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ এছাড়াও ক্লাসে পড়ুয়াদের সামনে বসিয়ে যেভাবে পড়ানো হয়, অনলাইনে সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না৷ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়ুয়াদের পড়ানোর কথা আগেই জানিয়েছিলেন৷ শিক্ষামন্ত্রী সেই আর্জি মেনে ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷
স্বপন বাবুর এই উদ্যোগে সামিল হয়েছেন স্কুলের আরও ৩ শিক্ষক৷ অরুন সাহা, স্বপন সরকার ও সৌরভ চৌধুরি, এঁরা প্রত্যেকেই ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক৷ সরকারিভাবে স্কুল খোলা না থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এক জায়গায় করে দফায় দফায় ৪ জন শিক্ষক নিচ্ছেন ক্লাস৷ স্থানীয় চার শিক্ষকের এহেন উদ্যোগকে প্রশংসা করেছেন স্থানীয় অভিভাবকরা৷ তাঁদের দাবি, স্কুল বন্ধ তাই পড়াশোনা বন্ধ৷ মাস্টারমশাইরা যেভাবে উদ্যোগ নিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছে, তাতে ওদের উপকার হচ্ছে৷ তবে খোলা মাঠে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হলেও শারীরিক দূরত্ব বিধি ও মাস্ক পরা ব্যবহার অবশ্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ দূরত্ব বজায় রেখে চলছে পঠন-পাঠন৷ করোনা আবহে বইয়ের পাতায় ফের চোখ রাখছেন গ্রামীণ এলাকার প্রাথমিক পড়ুয়ারা৷