কলকাতা: প্রকাশিত ২০২২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল৷ পাশের হার ৮৬.০৬ শতাংশ৷ তবে ফল প্রকাশের আগে পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের৷ খাতা জুড়ে অকথ্য ভাষার বন্যা৷ একি অতিমারির অবক্ষয়? নাকি অপারগতা থেকে মানসিক বিকৃতির বিস্ফোরণ? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়াটা সহজ নয়৷ তবুও উত্তর পাওয়াটা জরুরি৷ এ প্রজন্মের মনের শুশ্রূষার তাগিদে৷ ছাত্রছাত্রীদের এই বিকৃত চিন্তায় চিন্তিত শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে মনোবিদরা৷
আরও পড়ুন- মাধ্যমিকে কমল অঙ্কের নম্বর, সবই কি অতিমারির অবক্ষয়?
এদিকে, মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতায় অশ্লীল শব্দ ব্যবহারকারী পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে রাজ্য সরকার৷ পরীক্ষার খাতায় অশালীন শব্দ ব্যবহারের অপরাধে ৩ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করে দিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। ওই তিন পরীক্ষার্থীর স্কুল কর্তৃপক্ষকেও তলব তলব করা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্যে স্কুলগুলিকে সতর্ক করাও হয়েছে৷
পর্ষদ সূত্রের খবর, ওই ৩ পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনেও উত্তরপত্র দেখানো হয়েছে৷ দেখানো হয় তাঁরা খাতায় কী কুকথা লিখেছে৷ খাতা দেখার পর স্তম্ভিত অভিভাবকরাও৷ পরীক্ষার্থদের এহেন কাণ্ডে একইসঙ্গে বিরক্ত ও হতবাক পর্ষদ। ৩ জন পরীক্ষার্থীর খাতা বাতিল করার পাশাপাশি উত্তরপত্রে অশ্লীল শব্দ লেখার অভিযোগে আরও কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে বলেও পর্ষদ সূত্রে খবর।
করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি৷ অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতেই ফল প্রকাশিত হয়৷ তাছাড়াও গত দু’বছর ধরে অনলাইনেই চলেছে পঠনপাঠন৷ এই বছর করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় আগের মতোই মাধ্যমিক পরীক্ষার আয়োজন করা হয়৷ কিন্তু, পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়েই শিক্ষকদের চক্ষু চড়কগাছ৷ উত্তরের বদলে বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী খাতায় লিখেছে অশ্রাব্য গালিগালাজ৷ যা পর্ষদের ইতিহাসে বেনজির৷ অনেকে আবার উত্তর দিতে না পেরে, পরীক্ষকদের কাছে জানিয়েছেন পাশ করিয়ে দেওয়ার আর্জি৷
দীর্ঘদিন শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এত দিন ধরে পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ আকবরের শাসন ব্যবস্থা লিখতে গিয়ে আকবর-বীরবলের কাল্পনিক কাহিনী, গরুর রচনায় বিচিত্র চিন্তাভাবনার প্রকাশ, কিংবা পাশ করানোর আর্জি জানিয়ে ২০০ টাকার নোট সেঁটে দেওয়া, এগুলি বিরল নয়৷ অনেকে আবার খাতায় নৌকার ছবি এঁকে পরীক্ষকের কাছে হাতজোড় করে লেখেছে, ‘এ বারের মতো পার করিয়ে দিন। নৌকা উল্টে গেলে ডুবে যাব।’ কিন্তু উত্তরপত্রে অকথা-কুকথার এহেন বহিঃপ্রকাশ এককথায় অবিশ্বাস্য! যা নিয়ে চিন্তায় শিক্ষককুল৷
মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের কথায়, ‘‘১৫-১৬ বছরের ছেলেমেয়েদের এই ধরনের মানসিক বিকৃতির জন্য অনেক সময় বড়রাও দায়ী। অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের সামনে সবসময় শিক্ষকদের সম্মান দিয়ে কথা বলেন না৷ ছেলেমেয়েদের সামনে অভিভাবকদেরও গালিগালাজ করার প্রবণতা আগের থেকে বেড়েছে। সেই থেকেই হয়তো ছেলেমেয়েরা ভেবেছে পরীক্ষার খাতাতেও এই ধরনের অশ্রাব্য লেখা যেতে পারে৷’’
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>