পুজো-পাঠ ২০২০: ‘আকাশ’ কলমে সুশান্ত রায় কর্মকার
শুভময় আকাশ দেখতে খুব ভালবাসে। প্রতিদিন বিকেল হলেই সে আকাশ দেখে। দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। শুভময় আকাশ দেখেই চলে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সাদা তুলোর মতো মেঘের দিকে। কখনো বা কালো মেঘ আকাশ ছেয়ে ফেলে। শুভময় এর মনটাও ময়ূরের মতো নেচে ওঠে। নিজের অজান্তেই সে গেয়ে ওঠে " হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে... "।
শেষ বিকেলে পড়ন্ত রোদে আকাশের রঙের খেলা শুভময় এর মনকে পাগল করে তোলে। সে আনন্দে আত্মহারা হয়। আসলে আকাশের মধ্যেই সে নিজের জীবনের মুক্তি খোঁজে। আকাশের সীমাহীন বিস্তৃতি, তার উদারতা, মেঘেদের ডানা মেলে নিরুদ্দেশে উড়ে চলা তার মনকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। এ সবের মধ্যেই ভাল লাগলে মুঠোফোনে সে ভাল লাগার দৃশ্যগুলোকে বন্দী করে, আর সবচেয়ে প্রিয় ছবিগুলো প্রতিদিন সুর্যতপাকে পাঠায়। সেদিনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। শেষ বিকেলের অস্ত রাগের মায়ায় ভরা বেশ কিছু ছবি সে সূর্যতপাকে পাঠাতেই ওপাশ থেকে পাল্টা মেসেজ এলো, " জানো, তুমি আমায় সূর্যাস্তের ছবি আর পাঠিও না। আমার ভাল লাগে না। " শুভময় প্রথমে একটু ধাক্কা খেল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে জানাল, " আচ্ছা ঠিক আছে। "
পরদিন সকাল হতেই সে মুঠোফোন হাতে ছাদে চলল। সকালে সাধারণতঃ সে ছাদে যায় না। আজ নিজেও যেন খানিকটা নিজেকে বুঝে উঠতে পারল না। কিন্তু বেশ বুঝতে পারছিল কালকের সূর্যতপার ঐ কথাটা তাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে।
আজ ভোরের আকাশটা খুব সুন্দর লাগছিল। ছাদে গিয়েই সে ভোরের মায়াবী আলোয় ঘেরা আকাশের বেশ কিছু ছবি মুঠোফোনে বন্দী করে ফেলল। তারপর সেগুলো পাঠিয়ে দিল সূর্যতপাকে, আর লিখল " কাল তুমি বলেছিলে সন্ধ্যার আকাশ তোমার ভাল লাগে না, তাই তোমায় ভোরের আকাশ পাঠালাম। ভাল থেকো। " ওপাশ থেকে কোনো উত্তর এল না।
সময় পেরিয়েছে। আকাশের রঙ বদলেছে। বদলেছে জীবনের রঙ ও। শুভময় আর সূর্যতপা আজ দুই ভিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা। মাঝখানে অনন্ত আকাশ। কোথাও এতটুকু আলো নেই। নিবিড়, নিকষ কালো আঁধার যেন ঘিরে ধরেছে শুভময় এর জীবন। কোথা থেকে একরাশ কালো মেঘ উড়ে এল। ঝমঝম করে আকাশ জুড়ে বৃষ্টি শুরু হল। দূরে কোথায় যেন বাজছে রবিঠাকুরের গান
" শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে..."।