Aajbikel

পুজো-পাঠ ২০২০: ‘তোর চোখে সর্বনাশ’ কলমে সুবর্ণ

 | 
পুজো-পাঠ ২০২০: ‘তোর চোখে সর্বনাশ’ কলমে সুবর্ণ
 

সুবর্ণ প্রতিম গিরি

টলটলে নদীর জল। শান বাঁধানো পাড়। পরনের লালপেড়ে সাদা শাড়ি আর  ব্লাউজটি ছেড়ে দাঁতে দিয়ে চেপে ধরে পেটিকোটের সম্মুখ ভাগ। ওদিকে মন্ত্রোচ্চারণে গমগম করছে নদীর পাড়। থেমে থেমে বেজে উঠছে ঢাক—কাঁসর। সপ্তমীর সকালে তোর স্নানদৃশ্য দেখতে আমার বেশ মজাই লাগে। ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছিস স্বচ্ছ জলের মধ্যে। পায়ের পাতা ডুবছে, ডুবে যাচ্ছে হাঁটু। কোমর ছুঁয়ে মুগ্ধ হয়ে ঝরে পড়ছে জলের প্রেম-বিন্দু, একি অঘটন! জল বুক ছুঁতেই আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে গেল আমার। আমার বলছি, কারণ চোখে তুই দেবী দুর্গাঠাকুরের স্নানে নগ্নতা ভাবাও পাপ। আর আমার মজাটা এখানেই। সবার ঠাকুর, আমার প্রেমিকা। আর প্রেমিকার অবগাহন দৃশ্য। ভাবছিস হয়তো, মনে মনে এত! নাহ রে, মনের উপর যদি চোখকে ধারণ করা যায় তবে পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, যাবতীয় সৌকর্য হৃদয়ের পরম-চোখ ছুঁয়ে নিতে পারে অপূর্ব দক্ষতায়।

চোখের আমি, চোখের তুমি চোখ দিয়ে যায় চেনা। তোকে তো আমি ওই চোখ দিয়েই চিনেছি। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র যতই গলা গম্ভীর করে আবেগ মথিত হয়ে মহালয়ার ভোরে সবার ঘুম ভাঙিয়ে বলুন না কেন, তোর চোখ থেকে তেজরশ্মি নির্গত হয়। যতই তোর কপালে একটা রাগী রাগী চোখ এঁকে দিয়ে চক্ষুদান বলে বাকিরা মাতামাতি করুক না কেন, আমি দেখেছি, তোর চোখ ঝিলের মতো স্বচ্ছ, অতলান্ত গভীর, অমরাবতীর মতো শান্ত, সপ্তাকাশের বিশাল, বিধাতার লেখা এক কাব্যহাতছানি নয় ইশারায় ডাকে, জাগিয়ে তোলে তারুণ্য। এমনিতে তোর চোখে বাকিরা ওই অসুর বধের উপাখ্যান খুঁজে বেড়ালেও, আমি দেখি তোর আগোছালো লেপ্টে থাকা কাজল, মণিতে ঠোঁটের হাসির আবছা প্রতিবিম্ব, চোখের পাতার অদ্ভুত অবনমন, যেন আলতো খুলে আছে কামনার দরজা কিংবা ডানায় পিঠ ঢেকে বসে থাকা আধভেজা বুনোহাস। বাকিরা কে কী ভাবে তোকে দ্যাখে সেটা তাদের বিষয়, আমি তোকে একেবারে পুরুষ হিসাবেই দেখি।

হ্যাঁ, তোর পুজোর চারদিনও। যেভাবে পুরুষ তার প্রিয় নারীর দিকে তাকায়, যেভাবে পুরুষ তার নারীর চোখে চোখ রাখে, যেভাবে একজন পুরুষ শুধু চোখের ভেতরদিয়েই একজন নারীর হৃদয়রাজ্য জিতে নেয় আমি নির্লজ্জের মতো তোর দিকে সেভাবেই তাকাই। এ লালসা নয়, শুধুমাত্র কাম নয়, এ অনন্ত পৌরুষ। জানি, সময় হলে তুই ফিরে যাবি তোর  চেনা ঠিকানায়, ভালো খুঁজে নিবি একুরিয়াম বন্দি রঙিন মাছের ঝাঁক এবং পোষা পাশ বালিশের আলিঙ্গনের উত্তাপে। তখনও তোর অবাধ্য লক্ষ্মীছাড়া চুল এসে পড়বে সরু কপাল বেয়ে ভিনদেশী জলপ্রপাতের মতো। ভুল করেও দেখার লোক থাকবে না তোর দৃষ্টি জুড়ে গোধুলী আভায় ছবি আঁকার। তোর কামাতুর প্রেমিক চোখে বেঘোরে হারিয়ে যেতে চাইবে না কেউ। হাতে সময় পেয়েছিস গোটা একটা মলমাস। ওখানের বিষয়টা সেটেল করে আয়। যাতে আর ফিরতে না হয় তোকে। তুই বলবি, এ আপনার তত্ত্ব কথাআমি বলব, তাই এ সত্য...

Around The Web

Trending News

You May like