পুজো-পাঠ ২০২০: ‘একটা চিঠির জন্য’ কলমে অনসূয়া
অনসূয়া মুখোপাধ্যায়
"শোভা গাংগুলি --- চিঠি আছে ---সই করতে হবে।
ডাকপিওনের গলার আওয়াজে তিন্নি দৌড়ে যায়
হাতে একটা পেন নিয়ে।
"শোভা গাংগুলি কে হন তোমার? "
"দিদা"
"তাকে যে ডাকতে হবে। সই তাকেই করতে হবে।"
" তিনি ত মারা গিয়েছেন! "
"কবে!"
"বেশ কয়েক বছর! "
অবাক বিস্ময়ে ডাক পিওন বলেন ---" কয়েক বছর! অবাক কান্ড! মা কে বলো প্রমাণ নিয়ে পোষ্টাপিসে দেখা করতে... বলো কসবা থেকে চিঠি এসেছিলো"
কাল একবার গেলাম চন্দনপুকুর পোস্টাপিসে----
বলল হেড পোষ্টাপিসে যান। আজ গেলাম হেড পোষ্টাপিসে। শুনলাম মৃত ব্যক্তির চিঠি দেওয়া যায় না। আমাকে প্রেরকের কাছে আবেদন করতে হবে যে চিঠিটা যেন আমার নামে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।প্রেরকের ঠিকানা পাওয়া গেল না। চিঠি ফেরত চলে গিয়েছে।
কসবা য় আমাদের কেউ থাকে না। আমি গোলাঘাটের ঘাটে পা নামিয়ে বসে ছিলাম অনেকখন। নদীর জল বইছে উত্তর থেকে দক্ষিনে আচ্ছা এমন ত হতে পারে মা এর কোন ভাই বা বোন কসবা য় ফ্ল্যাট কিনে এসেছে ভেতরে লেখা ছিল ----"প্রিয় সেজদি,
কতদিন তোর কোন খবর পাই নি বল। "
মা জানল না।
কিংবা এমন ত হতে পারে মা র মেজ পিসি র লেখা -----" স্নেহের শোভা।
কল্যান নিবা। আমি ভালো আছি। পশ্চিমের আমগাছটা য় এবার মেলা আম হয়ে ছিল।তোমার কথা খুব মনে হচ্ছিল। ঝড়ের পর তুমি আর রানী মিলে কেমন আম টুকাইতা।"
হয়ত বা মা র কোন বন্ধু অনেক খুঁজে মার ঠিকানা টা পেয়ে চিঠি লিখেছিল
----- "শোভা,
------- চিনতে পারিস? আমি মাদারীপুরের দত্ত বাড়ীর আশা। মনে আছে!!?"
জলের ছলছল শব্দে আমার মনে পড়ল বাবা মাকে চিঠি লিখতেন" স্নেহের শোভা "সম্বোধন করে । মা লিখতেন" শ্রীচরণেষু "দিয়ে। স্নেহ আর শ্রদ্ধায় মিলেমিশে দাম্পত্য এর ভালোবাসা।
#######
----- এমন ত হতে পারে আমার কোন বন্ধু আমার খোঁজে মার ঠিকানায় চিঠি লিখেছিল ।
"মাসীমা,
অনেকদিন অনুর কোন খবর জানিনা তাই আপনার পুরানো ঠিকানায় লিখছি -----"
কসবা য় আমাদের কেউ থাকে না।
কসবা থেকে মা কে চিঠি লিখল কে!!কিছুই
জানা গেল না।
চিঠি ফেরত চলে গিয়েছে।
প্রেরকের ঠিকানা আমি জানি না।
সারা জীবন এই প্রশ্ন নিয়ে ওই অজানা উত্তর নিয়ে আমি ঘুরতে থাকবো ----
কে লিখেছিল ওই চিঠি?
কী লিখেছিল ওই চিঠিতে?
আমি জানতে পারলাম না কেনো??