কলকাতা: একুশ শতকের বাঙালি মধ্যবিত্ত চাহিদায় আজকাল নিজস্ব একটা বাড়ি একেবারে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনেদি পরিবার ভেঙে যতই বাঙালি ঝু্ঁকেছে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির দিকে, ততই যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিজের বাড়ির আকাঙ্ক্ষা। পৈত্রিক ভিটে থাকলেও অনেকেই গিয়ে উঠতে চান আধুনিক ফ্লাট বাড়িতে। আর মাথার উপরের সেই আশ্রয়, তা সে ছোটো হোক বা বড়, তাকে হাতের মুঠোয় পাওয়ার রাস্তা এখন আরো সহজ করে দিয়েছে গৃহ-ঋণ। এককালীন টাকা জোগাড়ের ঝক্কি না থাকায় নিজের বাড়ির ব্যবস্থা করতে তাই সকলেই এখন ছোটেন ঋণ নিতে।
শুধুমাত্র এককালীন টাকার অনুপস্থিতিই নয়, গৃহ-ঋণের অন্যতম আকর্ষণীয় দিকটি হল কর। বাড়ি বানাতে গেলে গৃহ-ঋণের মাধ্যমে বেশ খানিকটা কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়। তবে যে কোনো ঋণের ক্ষেত্রেই উপযুক্ত কাগজপত্র বিশেষ প্রয়োজন। ব্যাঙ্ক হোক বা অন্য কোনো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, গৃহ-ঋণের জন্য কী কী কাগজপত্র সর্বদা সঙ্গে রাখবেন আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা।
প্রথমত, গৃহ-ঋণের জন্য প্রথমেই সংশ্লিষ্ট ফর্ম ভরতি করতে হবে। খুব মনযোগের মাধ্যমে এই কাজ করা বাঞ্ছনীয়। ভুল হলে পরবর্তীতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, অবশ্যই লাগবে ঋণ গ্রহীতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি। একাধিক ছবি সঙ্গে রাখাই বাঞ্ছনীয়। তৃতীয়ত, যে কোনো ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আবশ্যক গ্রহীতার পরিচয়পত্র। এক্ষেত্রে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং পাসপোর্টের মধ্যে যে কোনো একটিই যথেষ্ট। চতুর্থত, জন্মের প্রমাণপত্র গৃহ-ঋণের জন্য দরকার হয়। বার্থ সার্টিফিকেট যদি নাও থাকে আধার কার্ড, মাধ্যমিক পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়ার সার্টিফিকেট অথবা যে কোনো সরকারি পরিচয়পত্র দিয়েই কাজ চলে, যাতে জন্ম তারিখের উল্লেখ আছে।
পঞ্চমত, বাড়ির ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে জমা দিতে হয় আধার বা ভোটার কার্ড। এছাড়া বিদ্যুতের বা টেলিফোনের বিল, জীবন বিমার প্রিমিয়াম রিসিট, পাসপোর্ট ও রেশন কার্ড এক্ষেত্রে গৃহীত হতে পারে। তালিকাভুক্ত সরকারি আধিকারিকের কাছ থেকে নেওয়া সংশাপত্রেও চলে কাজ। ষষ্ঠত, যাঁরা নির্দিষ্ট কোনো সংস্থার অধীনে চাকুরিরত এবং নিয়মিত বেতন পান, তাঁদের ক্ষেত্রে আয়ের প্রমাণপত্র প্রয়োজন হয়। ফর্ম-১৬, সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে নিযুক্তির সংশাপত্র, বিগত কয়েক মাসের পে-স্লিপ অথবা বিগত তিন বছরের আয়কর রিটার্ন আয়ের প্রমাণপত্র হিসেবে জমা দেওয়া যায়। সপ্তমত, যাঁরা স্বনির্ভর আয়ের অধিকারী তাঁদের ক্ষেত্রে আয়ের প্রমাণপত্র হিসেবে বিগত তিন বছরের আয়কর রিটার্ন, ব্যবসায়িক কাগজপত্র, পেশাদারদের লাইসেন্স, এসটাব্লিশমেন্ট সার্টিফিকেট, ব্যবসার ঠিকানার প্রমাণপত্র প্রভৃতি যে কোনো একটি গৃহীত হয়। অষ্টমত, সম্পত্তি ক্রয় সংক্রান্ত নথির কপি জমা দিতে হয় গৃহ-ঋণের জন্য। এক্ষেত্রে প্রয়োজন পূর্ববর্তী মালিকের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট, সম্পত্তির দলিল, বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরির খরচের বিস্তারিত হিসাব। এছাড়া প্রপার্টি ট্যাক্স ও সংশ্লিষ্ট করের রশিদ, সম্পত্তি কেনার জন্য দেওয়া অগ্রিমের রশিদ/ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, অনুমোদিত বিল্ডিং প্ল্যানের সার্টিফায়েড কপিও দরকার হয়।