৩ মাসের EMI স্থগিত? ছাড়ের পিছনে লুকিয়ে ‘বিপদ’! বাড়বে ঋণের বোঝা

৩ মাসের EMI স্থগিত? ছাড়ের পিছনে লুকিয়ে ‘বিপদ’! বাড়বে ঋণের বোঝা

imagesmissing

নয়াদিল্লি: করোনা পরিস্থিতিতে সমস্ত ঋণগ্রহীতাকে স্বস্তি দিতে আরবিআইয়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে ইকুয়াল মান্থলি ইনস্টলমেন্ট বা ইএমআই প্রদানে তিনমাসের জন্য স্থগিতাদেশ অনুমোদন করেছে ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। অর্থাৎ মেয়াদি ঋণের উপর গ্রাহকদের  ইএমআই দিতে হয়, এই দুর্দিনে আপাতত তিন মাসের জন্য তার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।  আপনার তিনমাসের ইএমআই মকুব করা হয়েছে এমনটা ভাবার কোন কারন নেই।

তবে তিনমাস পর থেকে এই ইনস্টলমেন্ট কিভাবে দিত হবে তা নিজেদের মতো করে স্থির করবে ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি।  ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য  ব্যাঙ্কগুলির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। নির্দেশিকাগুলি মন দিয়ে ধৈর্য ধরে পড়ে বুঝে নিতে হবে।   তারআগে সাধারণ ঋণগ্রহীতাদের সুবিধার জন্য কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করা হল এই প্রতিবেদনে।

১) ইএমআই স্থগিত রাখার বিষয়টি আসলে কি?

এটা নিশ্চিত যে সুদসহ ঋণ প্রদানে স্থগিতাদেশের মানে এই নয় যে আপনার ঋণ মকুব করা হয়েছে বা আর দিতেই হবেনা। এর অর্থ হলো এই ইনস্টলমেন্ট নির্ধারিত দিনের পরেও দেওয়া যাবে। যে গ্রাহকদের ১লা মার্চ থেকে ৩১ এপ্রিলের মধ্যে ইনস্টলমেন্টগুলি দেওয়ার কথা ছিল করোনা পরিস্থিতির জন্য সেই সময়সীমা তিনমাস পিছিয়ে দেওয়া হল।

২) এই সুবিধা কারা পাবেন?

আরবিআই-এর ঘোষণা অনুযায়ী সব ধরনের মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে। অর্থাৎ যে সব ঋণ নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে মাসিক কিস্তিতে শোধ করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সেই সব ঋণের ইএমআই এর আওতায় আসবে। এর মধ্যে পড়ছে বাড়ি, গাড়ি, শিক্ষার জন্য নেওয়া ঋণ। এমনকি ব্যক্তিগত ঋণের ক্ষেত্রেও এই স্থগিতাদেশ প্রযোজ্য। তা ছাড়া ফ্রিজ, টিভি, মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মতো ভোগ্যপণ্যের ঋণের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকর হবে যেখানে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে ঋণ দেওয়া হয়।

৩) ঋণগ্রহীতার সুদ মকুব হবে?

ঋণের উপর স্থগিতাদেশ থাকলেও তার জন্য নির্ধারিত সুদের উপর নয়। তাই তিনমাস সময়ের মধ্যে ঋণের অনুপাতে যা সুদ হয় তা কিন্তু গ্রাহকদের বকেয়া ইনস্টলমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হবে। অর্থাৎ অতিরিক্ত তিনমাসের ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। সুতরাং, বিশেষজ্ঞদের মতে এই পরিস্থিতিতে নিতান্তই অসুবিধায় না পড়লে তিনমাসের ভরসায় না থেকে সময়মতো ইনস্টলমেন্ট মিটিয়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এর প্রেক্ষিতে ছোট্ট একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। যেমন, আপনি যদি স্টেট ব্যাংক থেকে ১৫ বছরের মেয়াদে ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে থাকেন, তাহলে এই তিন মাসের সুবিধা নিতে গিয়ে আপনাকে অতিরিক্ত অন্তত ২.৩৪ লক্ষ টাকা সুদ গুনতে হবে। যা ৮ টি ইনস্টলমেন্টের সমান।

৪) এই তিনমাসের জন্য কোনো ফাইন (লেট পেমেন্ট ফি) দিতে হবে? 

না, এই তিন মাসের জন্য কোনো ফাইন দিতে হবেনা।

৫) এই তিনমাস ইএমআই দিতে না চাইলে/পারলে কিভাবে আবেদনজানাতে হবে?

আপনি স্বাভাবিক নিয়মে ইএমআই দিয়ে যেতে চাইলে আপনাকে কিছুই করতে হবে না। তবে এই সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই আপনার ব্যাংককে সেই আবেদন জানাতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, এইচডিএফসি ব্যাংকের গ্রাহকরা যারা তাদের ইএমআই স্থগিত করতে চান তারা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে উপলব্ধ ফর্মটি পূরণ করতে পারেন বা তারা 022-50042333, 022-50042211 নম্বরে কল করতে পারবেন। তবে এসবিআই গ্রাহকদের আবেদন জানানোর জন্য একটি ইমেল  করতে হবে এবং তাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ব্যাংকে জানাতে হবে।

৬) ইতিমধ্যেই কোনও গ্রাহক মার্চ মাসের ইনস্টলমেন্ট জমা করে থাকলে তার কি ফেরতযোগ্য হবে?

এক্ষেত্রে ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কোনো কোনো ব্যাংকে এই বিকল্প আছে কোথাও আবার নেই। তেমন স্টেট ব্যাংক এই সুযোগ দিচ্ছে। ব্যাংকের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।

৭) ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রেও কি ইএমআই তিনমাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে?

হ্যাঁ, ক্রেডিট কার্ডের বকেয়ার ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে ওই তিনমাসের সুদ গুনতে হবে। এমনিতেই ক্রেডিটকার্ড কম্পানিগুলো মোটা টাকা সুদ নেয়। ভারতে এই সুদের বার্ষিক হার ৩৬% থেকে ৪২%। এছাড়াও ক্রেডিট কার্ডের সুদের হারের সঙ্গে ১৮% জিএসটি-ও যুক্ত হয়।

শেষে আবারও উল্লেখ করা যায় যে, আরবিআই ঘোষণা করলেও তিনমাসের ইএমআই স্থগিত রাখার ক্ষেত্রে সমস্ত ব্যাংকগুলি সম্পূর্ণ নিজস্ব পরিকল্পনা অনুসারে এই ঘোষণা কার্যকর করবে। একটির সঙ্গে অন্যটির শর্তাবলীতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিল থাকলেও বহু অমিল থাকতে পারে। তাই ঝামেলা এড়াতে গ্রাহকদের তাদের নিজেদের ব্যাংকের শর্তাবলীগুলি ভালো করে জেনে নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *