নয়াদিল্লি: GST হার আরও কমানোর পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকার৷ আগামী অর্থবর্ষ থেকে GST-র সর্বোচ্চ হার ১৮ শতাংশ বাঁধতে চলেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ এই মুহূর্তে ৫১৭টি পণ্যের GST হার ১৮ শতাংশ রয়েছে৷ সংবাদ সংস্থা ANI-কে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে অর্থমন্ত্রী জেলটি জানিয়েছেন, সাধারণ মান হিসাবে জিএসটির হার ১২ থেকে ১৮ শতাংশের মধ্যে আনার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে৷ জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে এই নিয়ে পরবর্তী বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন জেটলি৷ এই মুহূর্তে ১৮৩টি পণ্যে জিএসটির হার ০ শতাংশ, ৩০৮টি পণ্যে ৫ শতাংশ, ১৭২টি পণ্যে ১২ ও ৫১৭টি পণ্যে ১৮ শতাংশ জিএসটি দিতে হয়৷ নয়া এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে ১৮ ও তার বেশি হারারের পণ্যগুলি ১৮ শতাংশের আওতায় চলে আসবে৷ এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মুখ একটা কাজে না এলেও ধনিদের জন্য সুখবর আসতে চলেছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের৷ কারণ, বিলাসবহুল পণ্যের ক্ষেত্রেই এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি জিএসটি চাপানো রয়েছে৷ ফসে, নয়া ভাবনা কার্যকর হলে দাম কমবে বিলাসবহুল সামগ্রীর৷
পাঁচ রাজ্যে ভরাডুবির জের? শনিবার জিএসটি পরিষদের বৈঠকের শেষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, কর কমছে মোট ২৩টি পণ্য ও পরিষেবার। নতুন কর কার্যকর হবে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে। আর সেজন্য কেন্দ্রের লোকসান ৫৫০০ কোটি টাকা। এভাবে ভোটের ঠেলা সামলাতে সান্তা হয়ে আবির্ভাব জেটলির।
Finance Min Arun Jaitely: Future road map could well be to work towards single standard rate instead of 2 standard rates of 12% and 18%. It could be a rate at some mid-point between the two. Obviously, this will take some reasonable time when the tax will rise significantly.#GST pic.twitter.com/mtS08T6kSb
— ANI (@ANI) December 24, 2018
হিন্দি বলয়ের ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পর আমজনতার মন পেতেই অরুণের এই পদক্ষেপ। কংগ্রেস সভাপতি এই নিয়ে ট্যুইট বোমাঘাত হানতে দেরি করেননি। তাঁর কথায়, বিধানসভা নির্বাচনে জনতার ফায়াসলা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে এখন মোদীজি গব্বর সিং ট্যাক্সকে জিএসটি বানানোর চেষ্টা করছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর কর ছাড় অবশ্যই মাস্টার স্ট্রোক দিল মোদী। এতে যে সাধারণ মানুষ খুশি হবে তা বলাই যায়। তাঁরা জিএসটির জটিল ধারাপাত জানতে চান না। জানতে চান এতে তাঁদের লাভ কিসে।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক, জিএসটি আসলে কী?
জিএসটি: পণ্য ও পরিষেবা কর, এক বিশাল কর সংস্কার ব্যবস্থার নাম। গুডস অ্য়ান্ড সার্ভিসেস অ্যাক্ট সংসদে পাশ হয় ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ। এই আইন কার্যকর হয় ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে। সারা দেশে অভিন্ন কর ব্যবস্থা চালু করতেই মোদীর এই পদক্ষেপ।
অধিকাংশ উন্নত দেশেই এই ধরণের সরলীকৃত কর কাঠামো আছে। ভারতে প্রথামিক হার্ডলগুলির মধ্যে ছিল কম্পিউটারাইজেশনের অভাব। সেই সমস্যা পুরোপুরি না মিটলেও অনেকটাই সুরাহা হয়েছে। এক ছাতার তলায় সব করকে আনার প্রয়াস এই কর সংস্কার ব্যবস্থা। এতে ডকুমেন্টেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোনও সামগ্রী উত্পাদন ও বিপণনের সময় করের যে কাসকেডিং এফেক্ট পড়ে সেটা সম্পূর্ণ নির্মূল করতে চাওয়া হয়েছে এই জিএসটি চালু করা মধ্য দিয়ে।
করের কাসকেডিং ব্যাপারটা কী?
কোনো সামগ্রী বা পরিষেবার ওপর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার আলাদা আলাা ভাবে যে রাজস্ব চাপায় তাকেই মূলত কাসকেডিং এফেক্ট বলে।
এখন কেন্দ্র যে কর নেয়
- ইনকাম ট্যাক্স
- সার্ভিস ট্যাক্স
- সেন্ট্রাল সেলস ট্যাক্স
- এক্সাইজ ডিউটি
- সিকুইরিটি ট্রানজাকশন ট্যাক্স
রাজ্য যে কর নেয়
- ভ্যাট বা সেলস ট্যাক্স
- রাজ্য এক্সাইজ
- প্রপার্টি ট্যাক্স
- এন্ট্রি ট্যাক্স
- এগ্রিকালচার ট্যাক্স
মোদ্দা কথা হল এই নতুন কর কঠামোয় কর বাবদ রাজ্যের আয়কে ক্ষুন্ন না করে এগোতে গেলে আর পাঁচটা দেশের মতো অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর সম্ভব নয়। ভারতে কর কাঠামোয় ৩ টি কর।
- সিজিএসটি
- আইজিএসটি
- এসজএসটি
তৃতীয়টি রাজ্যের, বাকি ২টি কেন্দ্রের। দুর্নীতিহীন পরিচ্ছন্ন কর ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই মোদী জিএসটি কার্যকর করেন। যদিও এই নিয়ে বিরোধীরা প্রথম থেকে সরব। মোদী-জেটলি কর কমিয়ে কিছু জিনিস সস্তা করায় আগামী লোকসভা নির্বাচনে মানুষ কী রায় দেন, সেই দিকে নজর থাকবে গোটা দেশের।