মুম্বই: রক্তাক্ত দালাল স্ট্রিট৷ আজ, সোমবার, ভারতীয় শেয়ারবাজারে চরম দরপতন দেখা গিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ববাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে ভারতীয় বাজারেও।
৪,০০০ পয়েন্ট পতন, নিফটি ২১,৭৫০-এর নিচে Stock market crash
আজ সকালে, বিএসই সেনসেক্স সূচক প্রায় ৪,০০০ পয়েন্ট কমে ৭২,১৩৯ পয়েন্টে পৌঁছেছে, এবং নিফটি ৫০ সূচক ২১,৭৫০ পয়েন্টের নিচে চলে গিয়েছে। এই পতন একেবারে অবিশ্বাস্য, কারণ মোমেন্টাম ছিল খুবই নেতিবাচক। বিশেষ করে মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপ সূচকগুলোর পতন আরও ভয়াবহ হয়েছে, প্রায় ১০ শতাংশের বেশি। এটি বাজারে অতিরিক্ত চাপ এবং শেয়ার বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করেছে।
ভারতীয় বাজারে অতিরিক্ত অস্থিরতা Stock market crash
এদিন, ভোলাটিলিটি ইনডেক্স (India VIX) প্রায় ৫২ শতাংশ বেড়ে ২১ পয়েন্টে পৌঁছেছে, যা বাজারের অস্থিরতার চূড়ান্ত নির্দেশক। এক কথায়, ভারতীয় শেয়ারবাজারে এক ধরণের তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি, অন্যদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা—এই দুটি বিষয় একসঙ্গে বাজারে ব্যাপক চাপ তৈরি করেছে।
বিশ্ববাজারে বিক্রি Stock market crash
বিশ্ববাজারে একযোগে বিপর্যয় ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া এবং ইউরোপ—সবখানেই শেয়ার বিক্রি হয়েছে। বিশেষভাবে, সিএমপি (S&P 500) ৫.৯৭ শতাংশ এবং ডাও জোনস ৫.৫০ শতাংশ কমেছে, যা সংকেত দেয় যে বিশ্ববাজারে এক অস্বাভাবিক আতঙ্ক বিরাজ করছে। এশিয়ার বাজারে, তাইওয়ান ওয়েটেড সূচক ১০ শতাংশ এবং নিখেই সূচক ৭ শতাংশ কমেছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় সংকেত।
পাঁচটি কারণ কেন শেয়ারবাজার পতিত হচ্ছে Stock market crash
১. বিশ্ববাজারের বিপর্যয়
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এই শুল্ককে “মেডিসিন” বলে অভিহিত করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি বিদেশী সরকারগুলিকে চাপ সৃষ্টি করতে চান। এর ফলে, বিশ্বজুড়ে বাজারে সেল-অফ চলছে।
২. শুল্কের প্রভাব এখনো মূল্যায়ন করা হয়নি
ট্রাম্পের ১৮০টি দেশের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বাজারে এক ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে। ভারতীয় বাজারে এই শুল্কের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনো পুরোপুরি মূল্যায়ন হয়নি, এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কিছু মাসে আরও পতন হতে পারে।
৩. বৃদ্ধির ধীরগতি এবং অর্থনৈতিক উদ্বেগ
বিশ্বব্যাপী শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব, বিশেষ করে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি, পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি শ্লথ করতে পারে। ভারতের ওপর সরাসরি প্রভাব কম হলেও, পৃথিবীজুড়ে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অনেকটাই হুমকির মুখে পড়তে পারে।
৪. এফপিআই আউটফ্লো
এপ্রিল মাসে আবারও বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা (এফপিআই) ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে ₹১৩,৭৩০ কোটি বিক্রি করেছেন। এটি বাজারের ওপর আরও চাপ তৈরি করেছে। অনেক বিনিয়োগকারী উদ্বিগ্ন যে, যদি ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে ভারত favorable চুক্তি না করতে পারে, তাহলে বিদেশী মূলধন আউটফ্লো আরও বাড়বে।
৫. আরবিআই মোনেটারি পলিসি এবং কোয়ার্টার ফলাফল
বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করছে, ৯ এপ্রিল রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) তার মোনেটারি পলিসি ঘোষণা করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুদের হার কমানোর সঙ্গে অন্যান্য সহায়তামূলক পদক্ষেপ নিতে পারে, যা বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া, কোয়ার্টার ফলাফলও শুরু হয়েছে, এবং বিশেষত টিসিএস এর ফলাফলগুলির ওপর নজর থাকবে।
ভারতীয় বাজারের ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা Stock market crash
বিশ্ববাজারে চলমান অস্থিরতা এবং ট্রাম্পের শুল্ক নীতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ভারতের বাজারের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারতীয় শেয়ারবাজারে আরও পতন হতে পারে। তবে, ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনও অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবিত, এবং কিছু সেক্টর যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, খুচরা ও ডিজিটাল সেবায় কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখাতে পারে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক দুর্বলতার মাঝে ভারতের বাজারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে শুল্ক নীতি এবং বৈশ্বিক মহামন্দার প্রভাব। তবে, আরবিআইয়ের ব্যবস্থা এবং দ্রুত সংশোধিত নীতির মাধ্যমে ভারতের অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারে।
Business: Indian stock market crashes with Sensex dropping 4000 points and Nifty below 21,750 amidst Trump’s tariff policy and global instability. Midcap and small-cap indices fall over 10%. Investors face panic as volatility surges to 52%, signaling major economic concerns.
