সাধারণের জ্বালানি যন্ত্রণা বাড়িয়ে বিপুল মুনাফা লুটছে রিলায়েন্স, কেন্

নয়াদিল্লি: বিশ্বের বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমতে থাকলেও পেট্রোপণ্যের দাম কমছে না কেন। সংসদে প্রশ্ন এসেছে এবছর ১৭ ডিসেম্বর। ঠিক মাস খানেক বাদেই ৮-৯জানুয়ারি আবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি। সেখানেও দাবির মধ্যে রয়েছে রেকর্ড হারে পৌঁছে যাওয়া পেট্রোপণ্যের দাম কমাও। সেদিন সাংসদদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান দাম কমানোয় দায়

সাধারণের জ্বালানি যন্ত্রণা বাড়িয়ে বিপুল মুনাফা লুটছে রিলায়েন্স, কেন্

নয়াদিল্লি: বিশ্বের বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমতে থাকলেও পেট্রোপণ্যের দাম কমছে না কেন। সংসদে প্রশ্ন এসেছে এবছর ১৭ ডিসেম্বর। ঠিক মাস খানেক বাদেই ৮-৯জানুয়ারি আবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি। সেখানেও দাবির মধ্যে রয়েছে রেকর্ড হারে পৌঁছে যাওয়া পেট্রোপণ্যের দাম কমাও। সেদিন সাংসদদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান দাম কমানোয় দায় এড়িয়ে গেছেন। খোলা বাজারের নীতি ২০১০ সালে চালু হওয়ার পর থেকে দাম বাজারেই ঠিক হয় সেটাই বুঝিয়েছেন। এতে কেন্দ্রের বিপুল হারে চাপানো করের বোঝা, অপরিশোধিত তেলের দাম কমায় তেল কোম্পানির বিপুল মুনাফা করা, এই মুনাফা থেকেও কেন্দ্রের প্রতিদিন বিপুল আয় বাড়ানো এসব জবাব মেলেনি।

পেট্রোপণ্যের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি বরাবরই জানিয়ে এসেছেন বামপন্থীরা। নয়া উদারবাদের নীতিতে এই সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হয়েছে। বাইরে যে কারণই দেখানো হোক, সবই বেসরকারি সংস্থার মুনাফার লক্ষ্যে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই দাম বৃদ্ধি আরও গতি পেয়েছে। একই সঙ্গে এতে বেসরকারি পেট্রোলিয়াম কোম্পানির মুনাফা বিপুল হারে বেড়েছে। শুধু মুকেশ আম্বানির বেসরকারি সংস্থার মুনাফার হার দেখলেই বোঝা যায় পেট্রোপণ্যের এই সময়ে দাম বৃদ্ধিতে কিভাবে তাদের স্বার্থ পূরণ হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রিলায়েন্সের পেট্রোলিয়াম কোম্পানির মুনাফা রেকর্ড হারে বেড়েছে। তা হলো ১৭.৪% হারে। এই মুনাফার পরিমাণ হলো ৯হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। যা গতবছর একই সময়ে ছিল ৮হাজার ১০৯ কোটি টাকা। কোম্পানির এই সময়ে মোট আয় হয়েছিল ১.৫৬লক্ষ কোটি টাকা। গত বছর এই আয় ছিল ১.০১লক্ষ কোটি টাকা। মুনাফায় এই রেকর্ড বৃদ্ধি পেট্রোল ডিজেলের দাম বেড়ে চলা ও বিশ্বের বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমে যাওয়ার ফলে বেড়েছে তা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী দায় এড়াতে দাবি করছেন দাম বাজারে নিয়ন্ত্রণ হয়, তা ইউপিএ আমলে গৃহীত নীতি অনুসারে হচ্ছে। অথচ মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৭ সালে পেট্রোল ডিজেলের দাম প্রতিদিন সংশোধনের নীতি গ্রহণ করা হয়। এ এক তামাসার নীতি। প্রতিদিনই পেট্রোল ডিজেলের দাম পালটায়। গত দু’বছরে এতে দাম বেড়েছে বেশি, কমেছে কম। এবছর পেট্রোলে রেকর্ড কমা হলো ৭পয়সা।

পেট্রপণ্য থেকে কেন্দ্রের কর ও ডিভিডেন্ড বাবদ যা আয় হয় তা এসময়ে বিপুল হারে বেড়েছে। মন্ত্রীর সংসদে পেশ করা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার সময় পেট্রোলে শুল্ক বসানো ছিল লিটারে ১১.০২ টাকা, ডিজেলে তা ছিল ৩.৫৬টাকা। এবছর অক্টোবরে পেট্রোলে তা বেড়ে হয়েছে ১৭.৯৮টাকা। ডিজেলে তা বেড়ে হয়েছে ১৩.৮৩টাকা। পেট্রোল, ডিজেল ও অপরিশোধিত তেলে শুল্ক, কর বসিয়ে মোদী ক্ষমতায় আসার বছর ২০১৩-১৪সালে আয় করেছিল ১লক্ষ ৫হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এর পর ২০১৪-১৫, ১৫-১৬, ১৬-১৭, ১৭-১৮ সালে আয় করে ১লক্ষ ২৬ হাজার ২৫কোটি, ২লক্ষ ৯হাজার ৩৫৪কোটি, ২লক্ষ ৭৩হাজার ২২৩ কোটি, ২লক্ষ ৮৪ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। মোদীর জমানায় এই আয় দ্বিগুণের বেশি হারে বেড়েছে। এদিকে পেট্রোলিয়াম কোম্পানি পেট্রপণ্যে যে মুনাফা করে তার উপর আয় কর ও ডিভিডেন্ডে প্রচুর আয় করে কেন্দ্র। তাতে দেখা যাচ্ছে উল্লিখিত সময়ে কেন্দ্রের আয় হয়েছে যথাক্রমে ৪৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, ৪৬ হাজার ৪০ কোটি, ৪৪হাজার ২৬১ কোটি টাকা, ৬১হাজার ৩০৯ কোটি, ৫৯ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। শুধু কেন্দ্রের নয়, রাজ্য সরকারগুলিও পেট্রোপণ্যের উপর বিপুল পরিমাণে কর চাপিয়ে তাদের আয় বাড়িয়েছে। তাতে উল্লিখিত সময়ে রাজ্যগুলি এতে আয় করেছে যথাক্রমে ১লক্ষ ৫২হাজার ৪৬০ কোটি, ১লক্ষ ৬০হাজার ২০৯কোটি, ১লক্ষ ৮৯ হাজার ৭৭৯ কোটি, ২লক্ষ ৯হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, সরকার পেট্রোপণ্যের উপর যথেচ্ছ পরিমাণে কর বসিয়ে তার কোষাগার ভরছে। কিন্তু তার দাম কমানোর কোনও উদ্যোগ নেই। উলটে সরকার দাম বাজার নীতিতে স্থির হবে বলে ঠিক করায় দাম বেড়েই চলেছে। এতে দাম কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *