চোখ ধাঁধানো বিয়ে! অস্বাভাবিক মৃত্যু! সিট গঠনের মাসখানেকের মধ্যেই গ্রেফতার রসিকার স্বামী কুশল

চোখ ধাঁধানো বিয়ে! অস্বাভাবিক মৃত্যু! সিট গঠনের মাসখানেকের মধ্যেই গ্রেফতার রসিকার স্বামী কুশল

imagesmissing

কলকাতা: রসিকা জৈন হত্যাকাণ্ডে নয়া মোড়৷ অবশেষে কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার রসিকার স্বামী কুশল আগরওয়াল৷ বুধবার রাতে আলিপুরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় কুশলকে। বৃহস্পতিবার তোলা হবে আদালতে। গ্রেফতারি এড়াতে কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন রসিকার স্বামী। তবে তাঁর সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। 

আরও পড়ুন- করোনা ত্রাস বাড়ছে! বাড়তি চিকিৎসক চাইছে বেলেঘাটা, চিঠি দিল রাজ্যকে

ডেস্টিনেশন ওয়েডিং, আলোর রোশনাই, চোখ ধাঁধানো জলসায় রূপকথার বিয়ে৷ রাজস্থানের উমেদ ভবনে বসেছিল রসিকা-কুশলের বিয়ের আসর৷ ধুমধাম করে এক হয়েছিল চার হাত৷ কিন্তু বছর ঘুরতেই বিষাদের সুর৷ রসহ্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় শিল্পপতি পরিবারের বধূ রসিকা আগরওয়াল জৈনের৷ তাঁর মৃত্যু আত্মহত্যা? নাকি খুন? এই প্রশ্নে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য৷ টুইটারে ‘জাস্টিস ফর রসিকা’ নামে একটি পেজও খোলা হয়। রসিকার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় সিট৷ তদন্ত শেষ গ্রেফতার রসিকার স্বামী৷  

২০১৯ সালে আলিপুরের রাজা সন্তোষ স্কোয়ার রোডের নামজাদা ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে রসিকা জৈনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আলিপুরেরই ডিএলখান রোডের ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে কুশল আগরওয়ালের৷ দুই পরিবারের পছন্দেই বিয়ে হয়েছিল তাঁদের৷ কিন্তু বিয়ের বছর ঘুরতেই আকস্মিক ভাবে মৃত্যু হয় রসিকার৷ ২০২১-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি বাড়ির নিচ থেকে উদ্ধার হয় শিল্পপতি কুশল আগরওয়ালের স্ত্রী রসিকা আগরওয়াল জৈনের রক্তাক্ত দেহ৷  প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় চারতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন রসিকা৷ কিন্তু, এই ঘটনায় রসিকার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে তাঁর পরিবার৷

 
রসিকার বাবা ব্যবসায়ী মহেন্দ্রকুমার জৈন জানান, দেখাশোনা করেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি৷  কিন্তু, শ্বশুরবাড়িতে সুখের মুখ দেখেনি তাঁর মেয়ে৷  ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা খরচ করে বিয়ে দেওয়ার পরেও কুশলের পরিবার বারবার পণের দাবি করত। তিনি জানান, কুশলও বড় ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে৷ আলিপুরে বড় বাড়ির পাশাপাশি পুরুলিয়াতে রিসর্টও আছে তাঁদের। কিন্তু এরপরেও পণের জন্য রসিকার উপর অত্যাচার চলাত তাঁরা।

জৈন পরিবারের অভিযোগ, বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত ছিলেন কুশল। সেটা জানার পরেই আপত্তি জানিয়েছিলেন রসিকা।  তিনি ছিলেন পরিবারের ছোট মেয়ে৷ ২০২০ সালে লকডাউন শুরু হওয়ার আগে ধুমধাম করে বিবাহবার্ষিকীও পালন করেছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু লকডাউনে ঘর বন্দি হতেই সুখী দাম্পত্য জীবনের ঘোর কাটে রসিকার৷ সন্দেহ ছিলই৷ লকডাউনে সেই সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হয়৷ রসিকা জানতে পারেন তাঁর স্বামী কুশল মাদকাসক্ত৷ সন্দেহ বিশ্বাসে পরিণত হতেই নিজের পরিবারকে সবটা জানিয়ে দেন৷ 

এর পর থেকেই তাল কাটতে থাকে জীবনের৷ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গেও বনিবনি হচ্ছিল না রসিকার৷ তাঁকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন কুশল৷ সেই সময় হাত পাততে বাধ্য হয়েছিলেন ভাইয়ের কাছ৷ ডিজিটাল ওয়ালেটে তিনি টাকা পাঠাতে বলতেন৷  এমনকী খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থার মাধ্যমে শ্বশুরবাড়ির ঠিকানায় খাবার পাঠাতেও বলতেন ভাইকে৷ 

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় রসিকার৷  ১৭ ফেব্রুয়ারি মেয়ের শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করে জৈন পরিবার। এর পর অবশ্য রসিকা মামলায় সে ভাবে পুলিশি তৎপরতা চোখে পড়েনি। পুলিশ কোনও রকম তদন্ত শুরু করেনি বলেই অভিযোগ করেন রসিকার পরিবার৷ এরপর মমলার তদন্তভার যায় আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেনের হাতে৷ কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি শম্পা সরকারের নির্দেশে  দময়ন্তীর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের সিট গঠন করা হয়। তদন্তভার নেওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই গ্রেফতার হলেন রসিকার স্বামী। 

রসিকা ছিলেন মহাদেবী বিড়লা গার্লস স্কুলের ছাত্রী৷ স্কুল পাশ করার পর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন৷ এর পর চলে যান সিঙ্গাপুর৷ সেখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে ফের কলকাতায় ফেরেন শিল্পপতি কন্যা৷ তিনি ছোট থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী৷ কিন্তু জীবনের অঙ্ক মেলাতে পারেননি তিনি৷ চলে যেতে হয় অকালেই৷