স্বাধীনতার পর দেশের বৃহত্তম সঙ্কট করোনা, কীভাবে রক্ষা? পরামর্শ রঘুরাম রাজনের

স্বাধীনতার পর দেশের বৃহত্তম সঙ্কট করোনা, কীভাবে রক্ষা? পরামর্শ রঘুরাম রাজনের

imagesmissing

নয়াদিল্লি: করোনা কবলিত ভারতের পরিস্থিতিকে ‘স্বাধীনতার পর দেশের বৃহত্তম সঙ্কট’ বলে ব্যাখ্যা করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। আগামী দিনে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে নিজের ব্লগে সরকারের এই মুহূর্তে করণীয় কিছু পদক্ষেপ ও সতর্কতামূলক কিছু পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

সোমবার টুইটারে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে একইসঙ্গে সরকারের প্রসংশা ও সমালোচনা করেন রাজন। তিনি লেখেন  “অর্থনৈতিকভাবে বলতে গেলে, ভারত সম্ভবত আজ স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে বড় জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। এটাই বলা হয়, সঙ্কটে পড়লেই সংস্কারের পথে হাঁটে ভারত। এটাই যেন হয়৷ তা নাহলে অনিশ্চিত দুর্দশা আমাদের দেখিয়ে দেবে সমাজ হিসেবে আমরা কতটা দুর্বল৷ জটিল অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যপরিষেবার সংস্কার এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷”

নিজের বক্তব্যে রাজন গুরুত্বপূর্ণভাবে মে বিষয়টি তুলে ধরতে চেয়েছেন তার হল, দায়িত্ব পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা সম্পন্ন মানুষদের ব্যবহার করা উচিত, এবং শুধু প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই যেন সবকিছু পরিচালিত না হয়।” তিনি আরো বলেন,  “এরপরেও যদি সরকার প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করার উপর জোর দেয়, যাঁরা ইতিমধ্যেই প্রচুর কাজের চাপে রয়েছেন তাঁদেরকেই কাজে লাগানো হয়, তা হলে খুব কম কাজ হবে, অনেক দেরিও হয়ে যাবে।  

রাজনের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত এমন সময়ে কাজ করতে পারছেন না এমন গরিব ও বেতনভুক নয় এমন নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পাশে দাঁড়ানো, যাতে তাঁরা এই সময়ে লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন। লকডাউন পরিস্থিতি থেকে পরিকল্পিত ভাবে ধাপে ধাপে ফিরে আসার ওপরেই জোর দিয়েছেন রাজন।

তিনি বলেন ‘‘কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের একসঙ্গে এগিয়ে আসা উচিত, যাতে খুব দ্রুত  সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগ (খাবার, স্বাস্থ্য ও আশ্রয়ের মতো বিষয়গুলিতে) গড়ে তোলা যায়। এ ছাড়াও ওই সব দরিদ্র পরিবারগুলিকে বেসরকারি উদ্যোগ ও ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের আওতায় আনা যাতে তাঁরা পরের কয়েক মাস চালিয়ে নিতে পারেন।’’ তাঁর মতে, এই রাস্তায় না হাঁটলে, ‘‘তার ফল যে কী হতে পারে তা পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘটনাতেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যদি মানুষ অন্য কোনও ভাবে বেঁচে থাকতে না পেরে, লকডাউন ভেঙে কাজকর্ম শুরু করেন তা হলে আরও একটা বিপর্যয় ঘটতে পারে।’’

তিনি আরো উল্লেখ করেন,” যেসমস্ত সুবিধাগুলি সরাসরি পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে সেগুলি সবার কাছে নাও পৌঁছতে পারে এবং যারা সুবিধাগুলি পাচ্ছেন তা তাদের প্রয়োজনের অনুপাতে পর্যাপ্ত নাও হতে পারে।” রাজন সতর্কও করেছেন যে, “আর্থিক ঘাটতি যে হারে ভয়ঙ্কর ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই নিম্নগামীতা কাটিয়ে ওঠার সামর্থ্য নেই ভারতের। কিন্তু অসহায়, দরিদ্রদের জন্য খরচ করা মানবিক কর্মসূচি, যা গ্রহণ করতেই হবে।”

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বুথ স্কুল অফ বিজনেসে অর্থনীতির প্রফেসর রাজনের দাবি, ২০০৮-০৯ সালেও অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছিল। কিন্তু তখন অবস্থা এখনকার তুলনায় মজবুত ছিল। সে সময় মানুষ কাজে যোগ দিচ্ছিলেন। কিন্তু এখন গোটা পরিস্থিতিই প্রতিকূল। তবে পরিস্থিতি হতাশার নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর মতে, উচিত সমাধান ও অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিলেই এই যুদ্ধে জয়লাভ করা যাবে। এসময় সরকারকে বিরোধীদের কাছে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন রাজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *