মৌমিতা বিশ্বাস: করোনা ধাক্কায় সংকটে বিশ্ব অর্থনীতি৷ যার প্রভাব পড়েছে ভারতেও৷ লকডাউনের জেরে বহু মানুষের উপার্জন বন্ধ হয়েছে৷ বিশেষ করে সংকটে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা৷ এই অবস্থায় আগামী তিন মাসের জন্য যাবতীয় ইএমআই স্থগিত রাখার জন্য ব্যাংকগুলিকে অনুমতি দেয় রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া৷ আরবিআই-এর এই ঘোষণার পরই বহু মানুষ আশার আলো দেখেছিলেন৷ তাঁরা ভেবেছিলেন, কোনও ধরনের টার্ম লোনের ক্ষেত্রেই ইএমআই কাটবে না ব্যাঙ্ক। হোম লোন, কার লোন, হাউজিং লোন, কর্পোরেট লোন, কৃষি লোন সব ক্ষেত্রেই এই নীতি প্রযোজ্য হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ধ্বন্দ৷
মাস পয়লা পড়তেই দেখা যায় বেশ কিছু ব্যাংক ইএমআই কাটতে শুরু করেছে৷ অনেকেই বুঝতে পারছেন না, আরবিআইয়ের নির্দেশ সত্বেও কেন ইএমআই কাটা হল? আসলে আরবিআই ব্যাঙ্কগুলিকে মোরাটোরিয়াম দিয়েছে। ইএমআই কাটা বন্ধ করার ব্যাপারে প্রতিটি ব্যাংক আলাদা ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। অর্থাৎ, আপনার ব্যাঙ্ক যদি অনুমোদন না দেয় তবে প্রতি মাসের মতো ইএমআই-এর টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে৷ এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষই শেষ কথা বলবে৷
কিন্তু এ ব্যাপারে অবগত নন অধিকাংশ গ্রাহকই৷ কিছু ব্যাংক এবিষয়ে গ্রাহকদের জানালেও, অধিকাংশ ব্যাংকের তরফেই সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি৷ যার জেরে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা৷ স্টেট ব্যাঙ্ক অবশ্য জানিয়েছে, ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ঋণের কিস্তি শোধ পিছনো হবে৷ কিন্তু ব্যাংকে টাকা থাকলেই ইএমআই কাটছে আইডিবিআই, ব্যাংক অফ বরোদার মতো বেশ কিছু ব্যাংক৷ মাস পড়তেই ইএমআই-বাবাদ টাকা কেটে নিয়েছে বাজাজ ফিনান্স, ক্যাপিটাল ফাস্টের মতো আর্থিক সংগঠনগুলিও৷ দেখা যাচ্ছে, সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি না দিলেও, অধিকাংশ ব্যাংকই কিন্তু টাকা কাটার পক্ষে৷
এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, দেশ যখন এত বড় সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন কেন মানবিকভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে না সব কটি ব্যাংক? যাঁরা সদ্য ব্যবসা শুরু করেছেন সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা৷ মাথার উপর ঋণের বোঝা৷ অথচ উপার্জন বন্ধ৷ সেই অবস্থাতেও লোনের টাকা কেটে নিচ্ছে ব্যাংক৷ অনেকে আবার না খেয়েও ছুটছে ব্যাংকের টাকা জমা দিতে৷ কারণ ইএমআই স্থগিত রাখছে না তাঁদের ব্যাংক৷ আবার এমনও মানুষ রয়েছেন, যাঁরা টাকা পান কাজ করলে৷ ব্যাংকগুলির এই সিদ্ধান্তে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরাও৷ বন্ধ সব রকমের ব্যবসা৷ অনেকেরই অভিযোগ, অ্যাকাউন্টে টাকা থাকলে, না জানিয়েই ইএমআই কেটে নেওয়া হচ্ছে৷ ফলে যাঁদের ব্যাংকে স্বল্প পুঁজি রয়েছে, প্রয়োজনে টাকা তুলতে পারবেন না তাঁরা৷
তবে এটাও ঠিক, এখন ইএমআই না দিতে হলেও তিন মাস পরে সেটা দিতে হবে। তবে লকডাউনের যেরে যাঁরা সংকটে পড়েছেন, সব ব্যাংক যদি মানুষের পাশে দাঁড়াত, সত্যিই উপকৃত হতেন তাঁরা৷