নয়াদিল্লি: মুকেশ আম্বানি। এই নামটা শুনে কেউ তাঁকে চিনতে পারবেন না এমন মানুষের সংখ্যা দেশে কেন, গোটা পৃথিবীতে হয়তো কম আছে। ভারতের সবথেকে ধনী ব্যক্তি তিনি। আবার বিশ্বের অন্যতম ধনীও। তাঁর নাম শুনে অবশ্যভাবেই একটা প্রশ্ন আগেই মাথায় আসবে যে তাঁর ধনসম্পদের পরিমাণ ঠিক কত। এটা জানার ইচ্ছে বা কৌতূহল প্রায় সকলেরই আছে। স্পষ্টতই তাঁর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের পরিমাণের হিসেব করতে বেশ কয়েকটি ক্যালকুলেটর প্রয়োজন। কিন্তু আরও একটি বিষয় আছে যা তাঁকে শুধু ধনীতম ব্যক্তি বানায় না, বরং ধনী মনের ব্যক্তিও বানায়। সেটা জানা আছে কি?
২০০২ সালে রিলায়েন্স গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই আম্বানীর মৃত্যুর পর ১৯৭৭ সাল থেকে রিলায়েন্স গোষ্ঠীর ‘বোর্ড অফ ডিরেক্টরস’-এ থাকা মুকেশ আম্বানি এই গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হন। তারপর থেকে এই পদের জন্য তিনি অন্যান্য সব কর্মচারীর মতোই বেতন নিয়ে এসেছেন বটে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮-’০৯ থেকে ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষ পর্যন্ত বার্ষিক বেতন হিসাবে রিলায়েন্স গোষ্ঠীর কাছ থেকে ১৫ কোটি টাকা করে নিতেন মুকেশ। কিন্তু জানা আছে কি যে, এরপর থেকে তিনি আর এক টাকাও বেতন নেননি! শুনলে আরও অবাক হবেন, ২০২৯ সাল পর্যন্ত রিলায়েন্সের চেয়ারম্যান থাকবেন মুকেশ আম্বানি। তবে এই সময়ের মধ্যে তিনি গোষ্ঠী থেকে বার্ষিক বেতন বাবদ এক টাকাও না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু কেন?
২০১৯-’২০ অর্থবর্ষ পর্যন্ত সংস্থা থেকে নিয়মিত বেতন নেওয়া মুকেশ আম্বানি কোভিড অতিমারির পর নিজের বেতন নেওয়া বন্ধ করেছেন। আপাতত শেষ তিন বছর ধরে তিনি কোনও বেতন বা ভাতা, কমিশন বা অন্য কোনও সুবিধা সংস্থা থেকে নিচ্ছেন না। করোনা অতিমারি শুরু হওয়া সেই ২০২০-’২১ অর্থবর্ষ থেকেই স্বেচ্ছায় বেতন না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। আসলে কোভিডের কারণে অন্যান্য সব ছোট-বড় ব্যবসা বা সংস্থার যে ক্ষতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল তার সম্মুখীন হতে হয়েছিল রিলায়েন্সকেও। তাই কোনও রকম অনিশ্চয়তার আঁচ যাতে সংস্থার কর্মীদের ওপর না পড়ে তা নিশ্চিত করতেই এই বিরাট সিদ্ধান্ত তাঁর। একধারে তিনি সংস্থার চেয়ারম্যান এবং অন্যধারে ম্যানেজিং ডিরেক্টর, তাও বর্তমানে কোনও বেতন পান না মুকেশ আম্বানি!
সাধারণ কোনও কর্মীর বেতন না পেলে যে সমস্যা হবে স্বাভাবিকভাবে সে সমস্যা মুকেশ আম্বানির হয়নি। একটি ব্যবসায়িক পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে মুকেশের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। বেতন না নেওয়ায় এই অর্থভাণ্ডারে কোনও প্রভাব পড়েনি আর পড়বেও না। হালকা ছলে বলতে গেলে, বার্ষিক ১৫ কোটি টাকাও তাঁর কাছে এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু নিজের সংস্থার অন্যান্য কর্মীদের জন্য তিনি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। মনে রাখতে হবে, তাঁর নাম, মুকেশ আম্বানি।