নয়াদিল্লি: করোনা ভাইরাসের অতিমারীর প্রকোপে বিশ্ব জুড়ে শুধু যে বহু মানুষের প্রাণ গেছে তাই নয়, সমাজ অর্থনীতি, বাণিজ্য, পরিবহন প্রভৃতি নানা দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সভ্যতা। এদেশেও দীর্ঘকালীন লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন বহু মানুষ। করোনা পরবর্তী কালে তাই দেশের সেই নুইয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করাই মূল লক্ষ্য কেন্দ্রের।
করোনা পরবর্তী সময়ে আগামী মাস থেকেই চালু হতে চলেছে কেন্দ্রের বাজেট অধিবেশন। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের আসন্ন বাজেটের দিকে তাই চেয়ে রয়েছেন আপামর ভারতবাসী। করোনা আবহে নড়বড়ে অর্থনীতিতে নতুন বাজেট পেশ করার চ্যালেঞ্জ কার্যত অর্থমন্ত্রীর অগ্নিপরীক্ষা, মত বিশেষজ্ঞদের। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে বাজেট থেকে ঠিক কী কী আশা করছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী? তাঁদের মন জয় করতে কী কী পদক্ষেপ নিতে পারেন নির্মলা সীতারামন? রইল তারই কিছু বিশ্লেষণ।
১) করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় ঘোষিত লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছেন অনেকেই। আবার অনেকের চাকরি থাকলেও বাড়ি বসে কাজের জন্য কমে গেছে বেতন। এইসব চাকুরিজীবীদের বেড়ে যাওয়া খরচ কমানোর চেষ্টা করতে পারে সরকার।
২) বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ন্যূনতম ছাড় পান দেশের করদাতা মধ্যবিত্ত শ্রেণী, তাঁদের সেই ছাড়ের পরিমাণ যদি বৃদ্ধি করা যায়, তবে নিঃসন্দেহে তা স্বস্তির হাওয়া বয়ে আনবে মানুষের জন্য। এক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড ছাড়ের (standard deduction) বিষয়টি বিবেচ্য হওয়া উচিত। বিশেষ কিছু ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড ছাড় ভোগ করেন করদাতারা। ২০২১-এর বাজেটে সেই ছাড় বাড়ানোর দিকে নজর থাকবে সাধারণ মানুষের। উল্লেখ্য, আগের দুই বাজেটেও এই ছাড় বাড়ানোর হয়েছিল।
৩) গৃহ ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের সময় দেড় লাখ টাকা অবধি ছাড় দেওয়ার কথা আগামী বাজেটে ভাবা উচিত সরকারের। পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি খুবই কার্যকরী হবে। তবে এই ক্ষেত্রকে ৮০সি ধারার প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।
৪) ৮০সি ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বিভিন্ন অর্থপ্রদান বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের দাবি করতে পারেন। এই ব্যবস্থা জীবন বীমা, ফিক্সড ডিপোজিট, গৃহ ঋণের সূচনার বরাদ্দ কিংবা প্রভিডেন্ট ফান্ড, যে কোনো ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ের আর্থিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এই কর ছাড়ের উর্দ্ধসীমা আড়াই থেকে তিন লাখ করে দেওয়া উচিত সরকারের। এতে জনগণ উৎসাহী এবং সরকারের প্রতি আস্থাশীল হবেন।
৫) বিশ্বজোড়া অতিমারী মানুষকে দেখিয়েছে স্বাস্থ্য বীমা একটা অত্যাবশ্যকীয় করণীয়, কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। জীবন বাঁচানোর জন্য এই ধরণের বীমার প্রয়োজনীয়তা সম্প্রতি বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। বিভিন্ন কোম্পানিও তাদের কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় ৮০ডি ধারা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বীমার উর্দ্ধসীমা বাড়ানোর কথাও ভাবা উচিত সরকারের।