নয়াদিল্লি: এখানে গোপনীয়তার কিছুই নেই যে ভারতে দুর্নীতি একটি প্রবল সমস্যা৷ আসলে এখানে সমস্যাটা হলো ‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’৷ অর্থাৎ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রক আইনের রক্ষাকর্তারাই যখন প্রতি মুহূর্তে আইন লঙ্ঘন করছে তখন দেশের দুর্নীতির ভিত যে আরো মজবুত হবে সেটাই তো স্বাভাবিক৷ কিছু টাকা হাতে গুঁজে দিলেই আইনের রক্ষকরা গান্ধীজীর তিন বানরের রূপ ধারণ করে৷ লোকচক্ষুর আড়ালে সমস্ত নৈতিক, অনৈতিক সমস্যার নিষ্পত্তি এভাবেই হয়ে যায়৷ ব্যতিক্রমী যদিওবা আছেন, কিন্তু সহকর্মীদের দুর্নীতির আড়ালে তারাও চাপা পড়ে যান৷
সম্প্রতি লোকাল সার্কেলস অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার করা একটি সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ঘুষ দেয়৷ আর আশ্চর্যের বিষয় একই সঙ্গে হতাশারও যে সবথেকে বেশি ঘুষ নেয় পুলিশ এবং শীর্ষ স্তরের সরকারি দপ্তরগুলি৷ ঘুষ আদায়ের ক্ষেত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন, পুরসভা এবং পরিবহন৷ কিন্তু ঘুষ নেওয়ার মতো ঘুষ দেওয়াও সমান অপরাধ তা জেনেও কেন ঘুষ দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে? নির্বিকার আমজনতা জানাচ্ছে ‘এটাই একমাত্র রাস্তা’৷
দুর্নীতির শিকার এরকম ১লক্ষ ৯০ হাজার সাধারণ নাগরিকের প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করেছে টিআইআই৷ এরই প্রেক্ষিতে সংস্থাটির মত, দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত এই পরিস্থিতির উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখছে না তারা৷ তাদের সংগৃহীত তথ্য অনুসারে একটি চার্ট তৈরি করেছে এই সংস্থা সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে-
১. বিগত এক বছরে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দেশের ৫১% মানুষ ঘুষ দিয়েছে৷
২. সাধারণ মানুষের দাবি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার এটাই একমাত্র রাস্তা৷ যখন তারা জানে ঘুষ দেওয়ার মতো অপরাধের শাস্তি সাত বছরের জেল অথবা ফাইন৷ কোন কোন ক্ষেত্রে এই দুটি শাস্তি একইসঙ্গে প্রযোজ্য৷
৩. বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘুষ হিসেবে দেওয়া হয়েছে নগদ টাকা৷ কখনো সেই টাকা দালাল মারফতও দেওয়া হয়েছে৷
৪. সরকারি অফিস গুলিতে সিসিটিভি আছে জেনেও সেখানে ঘুষ দেওয়া এবং নেওয়া হয়৷ যদিও অনেক সরকারি অফিসে সিসিটিভি অকেজো৷
৫. পুলিশ এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত ক্ষেত্রেই বেশিরভাগ ঘুষ দেওয়া হলেও, সরকারি দপ্তরের শীর্ষ বিভাগগুলিতেও ঘুষের প্রভাব উল্লেখ করার মতো৷
৬. দুর্নীতি কমানোর দাবি এবং এর জন্য নিত্যনতুন আইন প্রণয়ন হলেও পরিস্থিতি সেই তিমিরেই আছে৷
৭. ঘুষ এবং দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর জন্য বহু রাজ্যে হটলাইন অর্থাৎ বিশেষ কোন ফোন নাম্বারের ব্যবস্থাও নেই৷
৮. পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সবরকম উপায় থাকা সত্ত্বেও সরকার নির্বিকার৷ অবশ্য আমজনতার দাবি সরকারের সব প্রচেষ্টাই বিফলে যাবে৷
সুতরাং, বলাই যায় দুর্নীতি মুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন এখনও বিশ বাঁও জলে৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচারে কিছুটা উন্নতি হলেও, দুর্নীতি পরিসংখ্যান সূচকে ১০৮-টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ৭৮ তম৷