মোদী জামানায় অর্থনীতির ‘অচ্ছে দিনে’র বেহাল রিপোর্ট

নয়াদিল্লি: পাকিস্তান থেকে রাজীব গান্ধী, হিন্দুত্ব থেকে বিরোধীদের সন্ত্রাসবাদের সমর্থক তকমা দেওয়ার চড়া সুরের প্রচারের পর্দায় প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রের শাসক দল আড়াল করছে ভয়ঙ্কর তথ্য: দেশের অর্থনীতি বেহাল। গত কয়েক সপ্তাহে প্রকাশিত একের পর এক সমীক্ষায় অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই ফুটে উঠছে বিবর্ণ চিত্র। অর্থ মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্টে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার জানুয়ারি-এপ্রিল সময়কালে

imagesmissing

মোদী জামানায় অর্থনীতির ‘অচ্ছে দিনে’র বেহাল রিপোর্ট

নয়াদিল্লি: পাকিস্তান থেকে রাজীব গান্ধী, হিন্দুত্ব থেকে বিরোধীদের সন্ত্রাসবাদের সমর্থক তকমা দেওয়ার চড়া সুরের প্রচারের পর্দায় প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রের শাসক দল আড়াল করছে ভয়ঙ্কর তথ্য: দেশের অর্থনীতি বেহাল। গত কয়েক সপ্তাহে প্রকাশিত একের পর এক সমীক্ষায় অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই ফুটে উঠছে বিবর্ণ চিত্র।

অর্থ মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্টে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার জানুয়ারি-এপ্রিল সময়কালে নেমে এসেছে ৬.৫শতাংশে। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের হিসাবে অনুমান করা হচ্ছিল তা শেষ হওয়া অর্থবর্ষে ৭ শতাংশ হবে। তারও আগে দাবি করা হচ্ছিল ৭.৮ শতাংশ, এমনকি ৮ শতাংশও হতে পারে। তার ধারকাছ দিয়ে যায়নি বৃদ্ধির হার। উপরন্তু বুধবার এনএসএসও রিপোর্টে বোমা ফেটেছে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার পরিমাপে এক তৃতীয়াংশ ভুয়ো বা অস্তিত্বহীন সংস্থার হদিশ মিলেছে। ‘ভুয়ো খবরের’ রমরমার এই সময়ে ‘ভুয়ো জিডিপি’র’ আবিষ্কার অর্থনীতি মহলকে চমকে দিয়েছে। দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার এমন বেহাল অবস্থা কখনও ছিল না। শুধু অনাদায়ী ঋণের পরিমাণই ১৫লক্ষ কোটি টাকার সীমানা পেরোয়নি, কার্যত তুলে দেওয়া হচ্ছে অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। তাদের তহবিল শূন্য। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তহবিল থেকে উদ্বৃত্ত নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য যে সঞ্চয় কাজে লাগত, তা-ও ফাঁকা করে ভবিষ্যতের বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে বলে অভিমত অর্থনীতি মহলের।

বেহাল তালিকায় রয়েছে বিনিয়োগও। বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার অত্যন্ত শ্লথ। প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ পাঁচ বছরের সবচেয়ে কম স্তরে পৌঁছেছে। এপ্রিল-ডিসেম্বরে বিদেশি বিনিয়োগ ৭ শতাংশ সংকোচন হয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, বেসরকারি ক্রয়ের বৃদ্ধিও কমে যাচ্ছে। পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। সাধারণভাবে যেসব পণ্য বিক্রির সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা হয়, তার প্রায় প্রত্যেকটিই নিম্নমুখী। স্থায়ী বিনিয়োগ বৃদ্ধি খুবই শ্লথ। অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী খাদ্যপণ্য-বহির্ভূত ঋণও কমে গেছে। তার ফলে স্থায়ী বিনিয়োগে সমস্যা গভীরতর হয়েছে। পারিবারিক সঞ্চয়ের পরিমাণ ভয়ঙ্কর ভাবে কমেছে। ২০১৭-১৮’র হিসাবে মোট অভ্যন্তরীণ উৎদানের অনুপাতে তা ১৭.২ শতাংশে নেমে এসেছে। ১৯৯৭-৯৮’র পরে সবচেয়ে কম। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসাব এর ফলে মোট বিনিয়োগও কমেছে।

রিপোর্টে কৃষি ক্ষেত্রের সঙ্কটও প্রতিফলিত। নানা সমীক্ষায় আগেই দেখা গেছে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির হার দু’দশকে সবচেয়ে কম। অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, কৃষিতে মূল্য যুক্ত হওয়া বিদায়ী অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকেও বহাল থাকবে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে কৃষকের ফসলের লাভজনক মূল্য পাওয়া অনিশ্চিত, কৃষি ক্ষেত্রে চলতি মন্দা বহাল থাকবে। সবচেয়ে গুরুতর কর্মসংস্থানের হাল। বেকারির হার এপ্রিলে বেড়ে হয়েছে ৭.৬শতাংশ। ২০১৬-র অক্টোবরের পরে সর্বোচ্চ। মার্চেও তা ছিল ৬.৭১শতাংশ। বেসরকারি সংস্থা সিএমআইই’র ব্যাখ্যা কর্মহীনতার ঊর্ধ্বমুখী গতিই মূল প্রবণতা। মার্চে যে সামান্য কমেছিল তা ব্যতিক্রম মাত্র। এর আগেই জানা গিয়েছিল, বেকারির হার ৪৫ বছরের সর্বোচ্চ। যে তথ্যের ভিত্তিতে সেই হিসাব হয়েছিল তা ছিল ৬.১শতাংশ। কর্মহীনতা ক্রমেই বাড়ছে। পরিকাঠামো ক্ষেত্র বা মৌলিক ক্ষেত্রে (পরিভাষায় কোর সেক্টর) বৃদ্ধির হার দু’বছরে নিম্নতম। এই ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। কারখানার উৎপাদন আট মাসের মধ্যে শ্লথতম। নতুন বরাত বৃদ্ধির বদলে কমে গেছে। সুতরাং বেকারির আশঙ্কা আরও বাড়ছে। সিএমআইই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর্পোরেট ক্ষেত্রে নিয়োগ কমছে। উদ্বেগের একটি বড় ক্ষেত্র হলো পরিষেবা ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ২.২শতাংশ। গড় হারের অর্ধেক। পরিষেবা ক্ষেত্রের বিভিন্ন স্তরে যে কাজ হয়, তা-ও কমে যেতে থাকলে হাল আরও খারাপ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *