নিউ ইয়র্ক: কোভিড করোনার ধাক্কায় ধস নেমেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে৷ সারা বিশ্বের উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করলেন নোবেলজয়ী দম্পতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস্থার দুফলো৷
এই বিষয়ে এস্থার বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্বে সব চাইতে বড় সমস্যা হল মানুষের জীবন বাঁচানো৷ কিন্তু এর পরও একটি সমস্যা রয়েছে, তা হল ভবিষ্যতে তাঁদের কাজে ফেরানো৷ স্বাভাবিক অর্থনীতিতে ফিরে যাওয়া খুব একটা সহজ হবে না৷ প্রাণ বাঁচাতে বিভিন্ন দেশের সরকার যে পদক্ষেপ করছে, তার জন্য যেন আমাদের ভবিষ্যতে কর্মহীন হতে না হয়৷
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের চিকিৎসকের কথা শোনা ছাড়া কোনও উপায় নেই৷ বিশ্বের পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ৷ আমাদের হাতে রোগমুক্তির উপায় নেই৷ কেউ যদি দাবি করেন, এই অসুখ সারাতে পারবে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই উনি মিথ্যে বলছেন৷ এই রোগের হাত থেকে বাঁচতে নিজেদের আলাদা রাখাই আমাদের একমাত্র উপায়৷ আর যেটা করতে হবে, তা হল বারবার হাত ধোয়া, পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন থাকা৷ যাতে সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও রোগ না ছড়ায়।
কিন্তু এভাবে বিচ্ছিন্ন কত দিন থাকা সম্ভব? তার উপর রোজগার বন্ধ৷ আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ বন্ধ৷ ছ’মাস এমন চলবে, তা ধরে নেওয়া কি বাস্তবসম্মত? অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রশ্নের উত্তরে এস্থার বলেন, এই ভাবে দু’সপ্তাহ কাটানোই মুশকিল৷ ছ’মাস যে এভাবে চলতে পারে না, তা প্রায় নিশ্চিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকলে তুমি কবে থেকে কারফিউ জারি করতে? এস্থারের এই প্রশ্নের উত্তরে বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মডেল বলছে পাঁচ মাস৷ কিন্তু পাঁচ মাস ঘরে থাকার কথা ভাবলেই ভয় লাগে৷ লকডাউনের পরিসর আর একটু কম হলেই বিষয়টা বাস্তব সম্মত হবে৷ তবে ক্ষমতার থাকলে কী সিদ্ধান্ত নিতাম বলা মুশকিল৷ এক্ষেত্রে কিছু লোক মারা যাবেই৷ কিন্তু সব কিছু বন্ধ করতে বেশি সময় নিলে আরও বেশি মানুষ মারা যাবে৷ অন্যদিকে সব কিছু বন্ধ করার অর্থ পরিস্থিতির অবনতি৷ পাঁচ মাস সব কিছু বন্ধ থাকলে লোকে মনে করবে, নীতি তৈরির কোনও কেন্দ্রই আর কাজ করছে না। এক দিকে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দায়, অন্য দিকে বিপুল প্রশাসনিক ব্যয় ও অর্থনীতির প্রবল ক্ষতি৷ দাড়িপাল্লায় রাখলে যে কোনও একটা পাল্লা ভারি তো হবেই৷ প্রাণ বাঁচানোর কাজে একটু খারাপ করলে অর্থনীতিকে বাঁচানোর কাজটা হয়তো একটু সহজ হতে পারে … আমি জানি না। বলছি না যে বেছে নেওয়া সহজ কাজ হবে।’’
তিনি আরও বলেন, লকডাউন অল্প সময়ের জন্য হওয়াটাই বাস্তবসম্মত। আশা করা যায় এর ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর গতি কিছুটা কমবে। তারপরই মানুষকে বন্দি দশা থেকে মুক্তি দিতে হবে। মনে হয়, আরও ছ’মাস এই যুদ্ধ চলবে৷ কিন্তু এই ছ’মাসেই ধস নামবে বিশ্ব অর্থনীতিতে৷ এটা একেবারেই পরিষ্কার যে, এর ফল স্বরূপ ধনী দেশগুলি বাইরে থেকে আমদানি বন্ধ করবে৷ বিশ্বজুড়ে আমরা এক বিপুল মন্দা দেখব। ইতিমধ্যেই শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। মধ্যবিত্তের আয় কমেছে। পরিস্থিত সামলে উঠতে এখনও সময় লাগবে৷ এর মধ্যে মধ্যবিত্তরা উৎসাহের সঙ্গে জিনিসপত্র কিনবে, তেমনটা আশা করা যায় না৷ তাই আমাদের প্রয়োজন এমন নীতি যা এই ব্যবস্থাটাকে চালু রাখবে। চাহিদাকে ফের চাঙ্গা করবে। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় মানুষের আয় বিপুল কমবে৷ হাতের সঞ্চিত অর্থ খরচ করার সাহস পাবে না৷
বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগামী দিনের পরিস্থিতি আমাদের সামনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কে ফিরিয়ে আনবে, নাকি ২০০৯ সালের সংকট দেখা দেবে তা জানা নেই৷ তবে ভারত অনেকটাই সাবধানী৷ তাঁর পরামর্শ, মূল্যস্ফীতির ভয় না করেই অনেক টাকা ছাপানো হোক৷