করোনায় আর্থিক ক্ষতি রুখতে কী পরামর্শ দিচ্ছেন ২ বাঙালি নোবেলজয়ী?

করোনায় আর্থিক ক্ষতি রুখতে কী পরামর্শ দিচ্ছেন ২ বাঙালি নোবেলজয়ী?

imagesmissing

নয়াদিল্লি: একদিকে করোনা আতঙ্ক থেকে বিশ্বকে মুক্তি দিতে যেমন আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা, তেমনই এই মহামারীর জেরে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত বর্তমান ও ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জোরদার পদক্ষেপ নিতে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও।

ভারতের অর্থনীতিবিদরা এইমূহুর্তে দেশের দরিদ্রের শ্রেণীর জন্য সরকারের উদার এবং সঠিক বন্টন নীতির ওপরেই জোর দিচ্ছেন। একটানা লকডাউনের ফলে ভারতের মত জনবহুল দেশে থমকে যাওয়া অর্থনীতি ভবিষ্যতে বড়সড় বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কাজ হারানো ও সম বন্টন প্রক্রিয়ায় বাধাজনিত কারণ হাজার হাজার মানুষকে চরম দারিদ্রতার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে বুদ্ধি খাটিয়ে সংকট মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছেন নোবেলজয়ী দুই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তণ গভর্ণর রঘুরাম রাজন। বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদরা বলছেন করোনা প্রাদুর্ভাবে এইমুহুর্তে অনাহার যখন সবথেকে বড় উদ্বেগের কারণ তখন আপাতত খাবারের জোগান থাকলেও আয় ও সঞ্চয়ের অপ্রত্যাশিত ক্ষতি ভবিষ্যতে গুরুতর পরিনতি হয়ে দেখা দিতে পারে।

সরকারের কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনাও করেছেন তিনি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। তাঁদের বক্তব্য, ভারতের দরিদ্রদের জীবন-জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যেহেতু অভুক্ত মানুষের হারানোর মত বিশেষ কিছুই নেই, তাই লকডাউন বড়সড় ক্ষতির এড়াতে তাদের সহায়তা করা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। “সমাজ তাদের প্রতি যত্নশীল এবং তাদের ন্যূনতম ভালো থাকার বিষয়টি সুরক্ষিত হওয়া উচিত, এই আশ্বাস দেওয়ার জন্য আমাদের যা করা দরকার তা করা দরকার।” তিন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এই একই কথা লিখেছেন। তাঁদের মতে, সরকারকে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই)-র মজুত খাদ্য শস্যের মধ্যে থেকে কিছুটা বন্টন করে দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে হবে। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত যার পরিমাণ ছিল ৭৭ মিলিয়ন টন এবং তাঁদের মতে, এই মজুত অতীতের তুলনায় শুধু বেশি নয় বরং “বাফার স্টক নরমস” বা দেশের অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী, মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য তিনমাস অন্তর মজুত খাদ্য শস্যের তুলনায় তিন গুন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে রবি শস্য গুলিতে এটি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” জাতীয় ক্ষেত্রে জরুরী অবস্থার সময় বর্তমানে যাকিছু মজুত আছে তা বন্টন করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা।

অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ, সরকারের “যারা তাদের কার্ড এবং তাদের মাসিক বরাদ্দ সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়াতে চান তাদের প্রত্যেকের জন্য ন্যূনতম চেক দিয়ে তাদের অস্থায়ী রেশন কার্ড দেওয়া উচিত – সম্ভবত ছয় মাসের জন্য -“। তাদের মতে তাদের সত্যিই সাহায্যের প্রয়োজন,তাদেরকেই এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কৃষকদের জন্য অর্থ বরাদ্দ খুব কম এবং সীমিত আকারে হয়েছে। এক্ষেত্রে আশ্রয়হীন শ্রমিক এবং শহরের দরিদ্ররা বাদ পড়েছেন। সুতরাং দরিদ্রের অর্থ ও সাহায্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে ভেদাভেদ করা যাবেনা। সর্বোপরি অর্থনীতিবিদরা এটাই বলতে চেয়েছেন যে, প্রকৃত অর্থে যারা অভাবের মধ্যে রয়েছে তারা যেন কোনোভাবেই বঞ্চিত না হয় তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে সরকারকে।  তাদের প্রত্যেকের কাছে পর্যাপ্ত সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার উভয়কেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *