নয়াদিল্লি: চোখ রাঙাচ্ছে করোনা৷ লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা৷ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘ লকডাউনের ঘোষণা করা হলেও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না করোনা৷ মহামারীর এই পরিস্থিতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারতীয় অর্থনীতি৷ টান পড়েছে মধ্যবিত্ত জনতার৷ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ইতিমধ্যেই খরচ কমানোর ঘোষণা করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার৷ বাড়তি খরচ বাঁচিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার৷ কিন্তু, এই ব্যয় সংকোচনের মধ্যেই দেশের অতি বিত্তবানদের উপর অতিরিক্ত কর চাপানো হোক, কেন্দ্রকে একগুচ্ছ প্রস্তাব দিযেছে আয়কর অফিসার সংগঠনের৷
করোনা আবহে বেহাল অর্থনীতির গতি ফেরাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে আয়কর অফিসার সংগঠন ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের৷ আয়কর অফিসার সংগঠনের প্রস্তাব, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত ধনী ব্যক্তিদের আয়করের উপর অন্ততপক্ষে ৪০% কর বসানো হোক৷ ৪ শতাংশ হারে করোনা সেস বসানো হোক৷ বহুজাতিক সংস্থাগুলি উপর বাড়ানো হোক সারচার্জ৷
আয়কর অফিসার সংগঠনের ৫০ জন আধিকারিক জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের জেরে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলা করার জন্য সরকারকে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে৷ সেই কারণে তাঁদের প্রস্তাব, দেশে যে সমস্ত ব্যক্তিদের আয় বছরে ১ কোটি টাকার বেশি, তাঁদের ন্যূনতম আয়কর ৪০% হারে নেওয়া হোক৷ যাদের আয় বছরে পাঁচ কোটি ও তার বেশি, তাঁদের উপর অতিরিক্ত কর বসানো হোক৷ ফিরিয়ে আনা হোক সম্পত্তি কর৷ ফিসকাল ডিপোজিট রেসপন্স কোভিড-১৯ শীর্ষক ওই প্রস্তাবটি সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট এক্সেস বা সিবিডিটি’র চেয়ারপারসনের কাছে তা পাঠানো হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর৷ প্রত্যক্ষ কর পর্ষদকে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যাতে পারে, তার বিস্তারিত প্রস্তাব অফিসার সংগঠনের তরফে দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও অর্থনীতির হাল চাঙ্গা করতে আয়কর অফিসার সংগঠনের তরফে বেশ কিছু প্রস্তাব ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের কাছে প্রশ্ন জমা পড়েছে বলে সূত্রের খবর৷
গতবছর ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত অক্সফামের সমীক্ষায় বলছে, ভারতের ১০ শতাংশ অতিধনীর হাতে দেশের ৭৭ শতাংশ সম্পদ৷ ৬০ শতাংশ জনসংখ্যার হাতে রয়েছে মাত্র ৪.৮ শতাংশ জাতীয় সম্পদ৷ আবার দেশের মাত্র ৯ জন ধনীর সম্পত্তির পরিমাণই দেশের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার মোট সম্পদের সমান৷ অতি ধনীদের গত বছররে আয় হয়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ৷ অথচ ৬৭ কোটি গরীবের মোট সম্পদ বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ৷ গত এক বছরে টোটাল এলিট শ্রেণির মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ২০,৯১৩ বিলিয়ন৷ যা প্রায় ২০১৭-১৮ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটের সমান৷ অতি ধনীদের প্রায় ৩৭ শতাংশই উত্তারাধিকার সূত্রে ধনী৷ দেশের মোট সম্পদের ৫১ শতাংশই তাদের হাতে৷ মাত্র ৪ জন মহিলা বিলিওনার রয়েছেন ভারতে৷ তাদের মধ্যে তিন জনই উত্তারাধিকার সূত্রেই ধনী৷ এই হিসেবে চললে ২০১৮-২০২২ সালে ভারতে আরও ৭০ জন বিলিওনারের নাম যোগ হবে অতি ধনী তালিকায়৷ দেশের সবচেয়ে গরিব মানুষের সংখ্যা ১৩.৬ কোটি৷ মোট জনসংখ্যার ১০% মানুষ গরিব৷ ফলে, মহামারীর এই পরিস্থিতিতে অতি বিত্তবানদের উপর কর চাপানোর সঠিক সময় বলছে আম জনতা৷