কলকাতা: লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে ফের ছোট ব্যবসায় ঋণ দেওয়ার পরিষেবা শুরু করল বন্ধন ব্যাঙ্ক৷ ছোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত গ্রাহকদের অনুরোধ ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে এই পরিষেবা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে৷ যে গ্রাহকদের এই ধরনের ঋণের প্রয়োজন তাঁদের জন্য কম সংখ্যক কর্মীকে নিয়ে সীমিত এলাকায় এই পরিষেবা শুরু করা হয়েছে৷ পরিস্থিতি বিবেচনা করে তার পরিধি ক্রমশ বাড়ানো হবে বলে খবর৷
লকডাউন সত্ত্বেও ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকা মেনে বন্ধন ব্যাঙ্কের শাখাগুলি সীমিত সংখ্যক কর্মীদের নিয়ে পরিষেবা চালু রেখেছিল৷ কিন্তু ছোট ব্যবসায় ঋণ দেওয়ার পরিষেবা চালু ছিল না৷ সরকার যে এলাকাগলিকে গ্রিন জোন হিসাবে চিহ্নিত করেছে, শুধুমাত্র সেই এলাকায় ২০ এপ্রিল থেকে এই পরিষেবা শুরু করা হয়েছে৷ ছোট ব্যবসায়ী, কৃষি ও তার সহায়ক কাজের ক্ষেত্রে অর্থের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ কারণ, দৈনন্দিন ব্যবসার জন্য ক্ষুদ্র ঋণের উপর ভীষণ প্রয়োজন হয়ে থাকে৷ এই সময়ে ফসল কাটা ও পরবর্তী চাষের প্রস্তুতির জন্য চাষীদের অর্থের প্রয়োজন হয়৷ প্রয়োজনের সময়ে বন্ধন ব্যাঙ্ক তাঁদের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
মুদিখানা, খাবার ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর দোকানদার বন্ধন ব্যাঙ্কের নিয়মিত ঋণ গ্রাহক৷ তাঁদের চাহিদা ও প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেও ঋণ পরিষেবা পুনরায় শুরু করা হয়েছে। আর্থিক সাহায্য পেয়ে গেলে, তাঁরা আবার তাঁদের দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহ করা শুরু করতে পারবে। তার পর ক্রমশ তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবে৷ বন্ধন ব্যাঙ্কের ৪৫০০ ব্যাঙ্কিং আউটলেটের মধ্যে অনেকগুলি এমন জায়গায় রয়েছে যে মোটামুটি তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যেই বেশিরভাগ গ্রাহকরা থাকেন। ব্যাঙ্কের প্রত্যাশা যে গ্রাহকরা হেঁটেই অধিকাংশ স্থানে ব্যাঙ্কিং আউটলেটে পৌঁছে যাবেন। কিছু এলাকায়, যেখানে গ্রাহকরা ব্যাঙ্ক অবধি পৌঁছতে পারবেন না, সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক কর্মীরা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যাবেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান যে ধরনের কর্মসূচী পালন করছে তাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অনেকটাই সচেতন হয়েছেন। গ্রাহকরা ব্যাঙ্কিং আউটলেটে গেলে ব্যাঙ্ক কর্মীরা তাঁদের কিছু সতকর্তা মেনে চলতে বলবেন। যেমন, তাঁরা যেন মাস্ক বা কাপড় দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখেন, সোশাল ডিস্টেন্সিং মেনে চলেন ইত্যাদি। ব্যাঙ্কের কর্মীদেরও সব রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে চলতে বলা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাঙ্কিং আউটলেটে ব্যাঙ্ক কর্মী ও গ্রাহকদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
উপরিউল্লিখিত পরিষেবা কেবলমাত্র সরকার চিহ্নিত গ্রিন জোনের এলাকাগুলিতেই পুনরায় শুরু করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, রাজস্থান এবং হরিয়ানায় ২০ এপ্রিল থেকে এই পরিষেবা ফের শুরু হয়ে গিয়েছে। বাকি রাজ্যগুলিতেও স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ম ও নির্দেশিকা মেনে অচিরেই এই পরিষেবা শুরু করে দেওয়া হবে। বন্ধন ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও চন্দ্র শেখর ঘোষ বলেন, “লকডাউনের যে প্রভাব ব্যবসায় পড়েছে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য লকডাউন যেমন জরুরি ছিল, তেমনই পুনরায় আগের অবস্থায় সবকিছু ফেরাতে আর্থিক সহায়তাও দরকার। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ব্যবসায়ীদের যে অনুরোধ আসছে ও চাহিদা তৈরি হয়েছে তা বিবেচনা করে আমরা এই পরিষেবা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রয়োজনের সময় তাঁরা আমাদের সাহায্য পেয়েছে বলেই অসংখ্যা গ্রাহকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের এক মজবুত বন্ধন তৈরি হয়েছে। আমরা এই পরিষেবা সীমিত ভাবে শুরু করছি ঠিকই, কিন্তু ক্রমাগত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যাব, বাস্তবে কী অবস্থা রয়েছে তাও বিবেচনা করে দেখব, তার পর সেই অনুযায়ী ক্রমশ আগের মতোই পুরদমে এই পরিষেবা শুরু হয়ে যাবে। ”