কমবয়সি পাত্রী চাই, বিজ্ঞাপন ৭৪ বছরের অর্থনীতিবিদের

কলকাতা: এক বার নয়, বার চারেক হন্যে হয়ে পাত্রীর খোঁজ করেছেন। বিজ্ঞাপন দিয়েছেন বহুল প্রচারিত দৈনিকে। চুয়াত্তর বছরের বৃদ্ধের বিবাহ আহ্বানে সাড়া পড়েছে বিস্তর। কিন্তু মনের মত পাত্রী না পেয়ে রীতিমত হতাশ। রবিবার সাত এপ্রিল একটি বাংলা দৈনিকে পাত্রী চাই কলামে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন তিনি। লেখেন, পাত্র বিপত্নীক, ৭৪ বছর বয়স্ক, ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা।

কমবয়সি পাত্রী চাই, বিজ্ঞাপন ৭৪ বছরের অর্থনীতিবিদের

কলকাতা: এক বার নয়, বার চারেক হন্যে হয়ে পাত্রীর খোঁজ করেছেন। বিজ্ঞাপন দিয়েছেন বহুল প্রচারিত দৈনিকে। চুয়াত্তর বছরের বৃদ্ধের বিবাহ আহ্বানে সাড়া পড়েছে বিস্তর। কিন্তু মনের মত পাত্রী না পেয়ে রীতিমত হতাশ। রবিবার সাত এপ্রিল একটি বাংলা দৈনিকে পাত্রী চাই কলামে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন তিনি। লেখেন, পাত্র বিপত্নীক, ৭৪ বছর বয়স্ক, ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা। রিজার্ভ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ অফিসার। ৫০ বছরের কমবয়সি পাত্রী কাম্য। বৃদ্ধের বাড়ি বাগুইআটির কাছে। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্ত্রী মারা গিয়েছেন বছর তিনেক আগে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পাত্র যে সে ব্যক্তি নন। অর্থনীতি এবং ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর।

ফোনে তিনি বললেন, “জানেন, প্রাক্তন মন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত আমার সহপাঠি ছিলেন।“ বিজ্ঞাপনে দুটি ফোন নম্বরও দিয়েছেন। প্রথম সাত দিনে প্রায় পঞ্চাশ ফোন! এর বহর দেখে স্বয়ং পাত্রই অবাক হয়েছিলেন। বিজ্ঞাপন বের হওয়ার দিন সকাল থেকে ফোন দু’টি নিরন্তর বেজেই চলে। ওপারে কখনও পাত্রী স্বয়ং। কখনও আত্মীয়। মাঝে দিন সাতের মধ্যে ইচ্ছুক পাঁচ পাত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি বসে কথাও বলেন তিনি। কাউকে পছন্দ হয়নি। বলেছিলেন, “তাড়াহুড়ো তো নেই। কিছুদিন না হয় অপেক্ষা করি। যাচাই করে নিতে হবে তো!”

বৃহস্পতিবার রাতে, মানে বিজ্ঞাপন প্রকাশের প্রায় তিন সপ্তাহ বাদে ফোন করলে বৃদ্ধের গলায় হতাশার স্বর। বললেন, “একটাও পেলাম না। সবার নজর আমার সম্পত্তির ওপর।” মেয়ে কি রাজি? বৃদ্ধের দাবি, মেয়ে নিজের সংসারে নিজের মতো রয়েছেন। তাঁকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেননি। এ ব্যাপারে মেয়ের কিছু বলার থাকতে পারে না বলেই উনি মনে করছেন। একাকীত্ব কাটাতে নতুন জীবনসঙ্গিনী খুঁজছেন। কিন্তু এজন্য এই বয়সে বিয়ে? বৃদ্ধাশ্রমে যেতে পারতেন। বাড়িতে বিশ্বস্ত কাজের লোকও আনতে পারতেন। তাহলে তো একা থাকতে হত না! প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধের সাফ জবাব, চিরকাল নিজের মতো বেঁচেছি। বৃদ্ধাশ্রমে অনেক নিয়ম কানুন। সেসব পোষাবে না। আর কাজের লোক আনার থেকে বিয়ে করে নেওয়াটাই ভাল নয় কি! কোনও কথা ওঠার সুযোগ থাকবে না।”

খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনের বহর দেখেই বিষম খেয়েছেন রক্ষণশীলরা। তবে এ কথাও মেনে নিয়েছেন যে, ক্রমশ সাহসী হচ্ছে সমাজ। মনের মধ্যে চার দেওয়ালে চেপে রাখা কথাও ফলাও করে বিজ্ঞাপনে দিতে পিছপা হচ্ছে না মধ্যবিত্ত গেরস্থ। বিশিষ্ট বয়স্ক রোগবিশেষজ্ঞ কৌশিক মজুমদার বলেন, “ওই ব্যক্তির সৎ সাহস আছে। তাই বিজ্ঞাপন দিয়ে জীবনসঙ্গী খুঁজছেন। অনেকেই শেষ বয়সে এসে একজন অবলম্বন চান। তিনিও হয়তো চেয়েছেন। লন্ডনে তো অনেকেই করেন। আমারও কর্মসূত্রে বেশ কিছু বেশি বয়সে বিয়ে দেখার অভিজ্ঞতা আছে। তবে কেউ কেউ পারভারসন থেকেও বেশি বয়সে বিয়ে করতে চান। কিন্তু বিজ্ঞাপনের ধরন শুনে মনে হচ্ছে, উনি সত্যিই একজন সঙ্গিনী খুঁজছেন।” শেষ বয়সে একজন সঙ্গিনীর বড় দরকার। এ রকম একটা ভাবনা নিয়ে জার্মানি থেকে এসে এক মহিলাকে বিয়ে করেন এক অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। সে সময় বয়স ৬৯ বছর।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরেই তিনি চলে গিয়েছিলেন বিদেশে। বিশ্বখ্যাত একটি জার্মান সংস্থার অতি উঁচু পদে ছিলেন। বিয়ে করেন এক জার্মান মহিলাকে। কিন্তু গোড়া থেকেই মানিয়ে নিতে পারেননি। বহু যুগ ওঁরা পৃথক থাকেন। অবশেষে বৃদ্ধ বয়সে কলকাতায় এসে বিয়ে করে বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে জার্মানিতে যান। স্ত্রী যোগাসনে অভিজ্ঞ। জার্মানিতে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। ঢাকুরিয়ায় ওঁরা একটি ফ্ল্যাট কেনেন। মাঝে মাঝে জার্মানিতে, মাঝে মাঝে এ দেশে থাকেন। শেষ জীবনে বেঁচে থাকার অন্য অর্থ খুঁজে পেলেন এই দম্পতি। সবার অবশ্য কপালে এ রকম থাকে না। শহরের বিশিষ্ট এক মনোবিদের বক্তব্য, বেশি বয়সে বিয়ের কথা প্রকাশ্যে বলতে আগে অনেকেই ভয় পেতেন। কিন্তু এখন আর তা পান না। ওঁরা লুকিয়ে কিছু করতে চাননি। সমাজের সমালোচনাকেও ভয় পাননি। ভাল থাকার অধিকার সকলের আছে। সমাজ যে বদলাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four − four =