কলকাতা: করোনা অতিমারীর যে করাল ছায়া প্রায় বছরখানেক ধরে গ্রাস করেছিল গোটা বিশ্বকে, এদেশে মা সরস্বতীর পুজো তার হাত থেকে খানিক রেহাই পেয়েছে বলেই মনে হয়। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসেও বিশ্বের নানা প্রান্তে করোনা ছিল সূচনার পর্যায়ে। এদেশে তখনও লকডাউনের দরকার পড়েনি। আর এবছর ফেব্রুয়ারি অতিমারী পরবর্তী বিশ্বের ঘুরে দাঁড়ানোর সাক্ষী থাকছে। ফলে সরস্বতী পুজোর উপর অতিমারীর প্রভাব স্বভাবতই বেশ কম।
কিন্তু করোনা কাটা দূর হলেও এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় রাগে গজগজ করতে দেখা গেল বিদ্যার দেবীকে। বাঙালি পড়ুয়াদের উপর রীতিমতো অসন্তুষ্ট মা সরস্বতী। কেন হঠাৎ চটলেন বাগদেবী? উত্তর মিশে রয়েছে সেই করোনাতেই। অতিমারী আবহে সারাবছর অনলাইনে পড়াশোনা করে আজ পুজোর দিন মায়ের পায়ে বইখাতা ছোঁয়ানোতেই যত অসন্তোষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে তাই বীণাপাণির আদেশ, “বই-খাতার সঙ্গে আমার চরণে স্মার্ট ফোন, ট্যাবটাও রেখে যা।”
করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে সম্ভবত সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থার উপর। দীর্ঘ ১১ মাস ধরে বন্ধ ছিল স্কুল কলেজের দরজা। পঠনপাঠন চলেছে ডিজিটাল মাধ্যমে অনলাইনে। ভ্যাকসিন আসার পর পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিকের পথে হাঁটলেও তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরস্বতী পুজো নিয়ে রসিকতায় মেতেছেন নেট নাগরিকরা। বস্তুত, যে মোবাইল ফোন এতকাল ছিল স্কুলের নিয়মাবলীতে নিষিদ্ধের তালিকায়, এখন সেই মোবাইলই পড়াশোনার একমাত্র ভরসা। তাই মাঘ পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যার দেবীও চরণতলে দাবি করছেন স্মার্টফোন। তাঁর এই দাবি নিয়ে এখন কার্যত সরগরম নেট পাড়া। তৈরি হয়ে চলেছে একাধিক মজাদার ছবি।
মা সরস্বতীর দাবি কতটা মানতে পারছে পড়ুয়ারা, সে বিষয়ে অবশ্য তর্ক রয়েছে। বই-খাতা দেবীর পদতলে তিন চারদিন ধরেও ফেলে রাখা যায়। কিন্তু তাই বলে স্মার্টফোন? ওটা কি এ দণ্ডের জন্যেও হাতছাড়া করার উপায় রয়েছে? আধুনিক প্রজন্মের দিন রাত কাটে মুঠোফোনের পর্দাতেই। তাই বাগদেবীর আদেশে যে বিপাকে পড়েছে পড়ুয়ারা, তা বলাই বাহুল্য।