কলকাতা: এক সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ। বাড়ি সুদূর দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা এলাকায়। বাড়িতে রয়েছে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়া একমাত্র মেয়ে। জোকা হাসপাতালে এসেছিলেন অসুস্থ এক আত্মীয়কে দেখতে। আর পাঁচজন সাধারণ গৃহবধুর থেকে কোন দিক থেকেই আলাদা নন শুভ্রা ঘোড়ুই। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের এই সাধারণ গৃহবধূই বর্তমানে সংবাদের শিরোনামে। কারণ কিছুক্ষণ আগেই রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তিনি পরপর দুবার জুতো ছুড়ে মেরেছেন। মঙ্গলবার সকালে আদালতের নির্দেশ মেনে পার্থ এবং অর্পিতাকে ফের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জোকার ইএসআই হাসপাতালে। তখনই ঘটেছে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে যখন পুনরায় গাড়িতে তুলছিলেন ইডি অধিকারিকরা তখনই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে লক্ষ্য করে জুতা ছোঁড়েন এই মহিলা। কিন্তু কেন? কি কারণে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপর এত ক্ষোভ তাঁর? রয়েছে কি কোন ব্যক্তিগত কারণ?
সংবাদমাধ্যমের এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরে আমতলার বাসিন্দা শুভ্রা ঘোড়ুই জানালেন, তাঁর সঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতার সম্পর্ক নেই। তিনি চাকরিপ্রার্থীও নন। কিন্তু যেভাবে গত কয়েক সপ্তাহে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দুর্নীতির একের পর এক ছবি সকলের সামনে ফুটে উঠেছে তা দেখেই মেজাজ হারিয়েছেন শুভ্রা দেবী। আর তাই তাঁকে ‘কেন করেছেন’ প্রশ্ন করতেই রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে উঠে ওই মহিলা বলেন, ‘কেন করেছি জানেন না? ওনাকে মালা পরিয়ে বরণ করলে খুশি হতেন নাকি? রাজ্যে বেকারদের কি অবস্থা ! কত গরীব মানুষের কত টাকা…. আর উনি কোটি কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনছেন।’
তবে একা পার্থ চট্টোপাধ্যায় নয় ওই মহিলা এদিন ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘যার নামে এত দুর্নীতি তাঁকে এসি গাড়িতে বসিয়ে হুইলচেয়ারে করে ঘোরাচ্ছেন। ওনাকে গলায় দড়ি দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়ার কথা।’ অন্যদিকে তাঁর ছোঁড়া জুতো লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় আফসোসের শেষ নেই শুভ্রা দেবীর। বললেন, ‘ আমি আরো খুশি হতাম যদি আমার ছোঁড়া জুতোটা ওনার টাকে লাগত।’
হাসপাতাল সূত্রে খবর, বর্তমানে শুভ্রা ঘোড়ুইয়ের এক আত্মীয় ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে দেখতেই হাসপাতাল চত্বরে এসেছিলেন ওই মহিলা। অন্যদিকে তিনি নিজেও অসুস্থ বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। এই ঘটনার পরেই তাঁকে সাংবাদিকেরা ঘিরে ধরলে শুভ্রদেবী বলেন, ‘আমাকে দয়া করে ছেড়ে দিন। আমি নিজেও হাই পাওয়ারের ওষুধ খাচ্ছি। সব সময় মাথা ঘুরছে।’ সাংবাদিকদের হাত থেকে কোনক্রমে মুক্তি পেয়েই আত্মীয়ের জন্য ওষুধ কিনতে চলে যান অইই মহিলা।